বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে মোদী সরকারের বাজেটে যেমন তেমন কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি। ঠিক তেমনই চাহিদার মানোন্নয়নেও কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে পারেনি কেন্দ্র। আর এই দুই কারণেই একদিকে যেমন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে ভারতের শিল্প সংস্থাগুলোকে, তেমনি এই অবস্থায় কার্যত তলানিতে পৌঁছেছে পরিকাঠামো বৃদ্ধিও। সবমিলিয়ে দেশের অর্থনীতির বেহাল দশা। কেন্দ্রীয় সরকার এ কথা মানতে না চাইলেও অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, আগামী দিনে আরও কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হবে আর্থিক ক্ষেত্রে। এই অবস্থায় মোদী সরকারের পাশে দাঁড়িয়ে আরএসএস-প্রধান মোহন ভাগবত জানিয়ে দিলেন, জিডিপির হিসেব দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে যাচাই করা যায় না। আর্থিক বৃদ্ধির হার শূন্যের নীচে না-নামলে তাকে মন্দাও বলা যায় না।
নাগপুরে সঙ্ঘের বিজয়াদশমীর অনুষ্ঠানে সরসঙ্ঘচালকের দাবি, অর্থনীতির হাল নিয়ে দেশ জুড়ে ‘বড্ড বেশি কথা হচ্ছে’! তাঁর মতে, মন্দা নিয়ে ‘অহেতুক আলোচনা’ আখেরে দেশের অর্থনীতির পক্ষেই ক্ষতিকর হচ্ছে। ভুল বার্তা যাচ্ছে শিল্প গোষ্ঠী তথা বণিক মহলের কাছে! একই সঙ্গে সঙ্ঘের দীর্ঘদিনের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসে জানিয়ে দিলেন, দেশের স্বার্থেই বিলগ্নিকরণ এবং বিদেশি লগ্নির বিরোধী নয় সঙ্ঘ। উল্লেখ্য, খোদ সরকারি তথ্যই বলছে, চলতি আর্থিক বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে আর্থিক বৃদ্ধির হার (জিডিপি) এসে ঠেকেছে ৫ শতাংশে, গত ছ’বছরে যা সর্বনিম্ন। বিশেষজ্ঞরা উদ্বিগ্ন। অর্থনীতির এই হাল নিয়ে সম্প্রতি মোদী সরকারকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও।
তবে এরপরও ভাগবত সঙ্ঘের মঞ্চ থেকে বললেন, ‘আমাদের দেশ ঠিকই এগোচ্ছে। বিশ্বের অর্থনীতি একটা চক্রের মধ্যে দিয়ে চলে। তাতে বাধা এলে কখনও বৃদ্ধির হার কমতে থাকে। সেটাই মন্দা। কিন্তু এখনই এ নিয়ে এত আলোচনার মতো কিছু হয়নি।’ তবে ভাগবত এমনটা বললেও শরিক শিবসেনার প্রধান উদ্ধব ঠাকরে কিন্তু একই দিনে দেশের আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে একহাত নিলেন মোদীকে। ভাগবতের মন্তব্যের কথা উল্লেখ না-করেই তিনি বলেন, ‘এটা মন্দা কি না, সেটা পরে দেখা যাবে। কিন্তু ব্যবসা যে বন্ধ হচ্ছে, দেশে চাকরি নেই— এ সব তো খালি চোখেই দেখা যাচ্ছে। এই বাস্তবটা মানতেই হবে।’ তবে দেশের অর্থনীতিতে সঙ্কট যে একটা এসেছে, তা একপ্রকার মেনেই নিয়েছেন সঙ্ঘ প্রধান। তাঁর কথায়, ‘বিষয়টা নিয়ে সরকার যথেষ্ট সংবেদনশীল। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ করাও হয়েছে। আগামী দিনে তার ফল মিলবে। তাই সরকারের প্রতি আস্থা রাখুন।’