উৎসবের আবহে ইছামতীর পাড়ে মিশে গেল দুই বাংলার হৃদয়। এপারে টাকি ও ওপারে সাতক্ষীরা। মাঝে ইচ্ছামতীর বুকে প্রতিমা নিরঞ্জন। বিসর্জন মিলিয়ে দিল দুই দেশকে। তবে প্রতিমা নিয়ে যতগুলি নৌকা ছিল তার থেকে অনেক বেশি ছিল পর্যটক বোঝাই নৌকা। প্রশাসনের তরফে কড়া নির্দেশ ছিল সাড়ে পাঁচটা মধ্যেএ প্রতিমা বিসর্জনের পালা সাঙ্গ করতে হবে। ভাসানের জন্য রাজবাড়ি ঘাট, বিডেপি ঘাট ও হাসনাবাদ ঘাট নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল প্রশাসন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখভালের জন্য রাজ্যস্তরের পুলিশ আধিকারিকরাও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন নৌকা ও ভাসানের জন্য নির্দিষ্ট ঘাটে।
বসিরহাট মহকুমার টাকি দুই বাংলার বিসর্জনে একসময় সীমান্তের দুই পাড়ের মানুষের মেলবন্ধন ঘটত। আজও সেই স্মৃতি উস্কে দিয়ে ইছামতি নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেখতে রাজ্য ছাড়িয়ে ভিন রাজ্য এমনকি বিদেশ থেকে পর্যটকরা ভিড় করে টাকি সীমান্তে। বিএসএফ ও বিজিবির অতন্দ্র প্রহরার মধ্য দিয়ে ইছামতি নদীতে মঙ্গলবার বিসর্জন হয়। নদীর মাঝ বরাবর দু’দেশের সীমান্তরক্ষীরা নজরদারি চালান যাতে এপার ওপার প্রতিমা বিসর্জনকে কাজে লাগিয়ে নদী পেরিয়ে ওপার বাংলার মানুষ এদেশে যাতে না ঢুকতে পারে। এদেশের মানুষও ওপার বাংলায় না যেতে পারে। তার জন্য প্রশাসনের কড়া নির্দেশ আগেই দেওয়া ছিল এবং উল্লেখ্য, ইছামতীর তীরে গতকাল কোনও বিশৃঙ্খলা ঘটেনি।
২০১১ সালে দু’দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয় ইছামতী নদীতে প্রতিমা বিসর্জন করা হলেও কেউ জলসীমান্ত লঙ্ঘন করবে না। তাই ইচ্ছা থাকলেও বিজয়াদশমীর কোলাকুলি আর সারা হল না দুই বাংলার মানুষের মধ্যে। ফলে মা চলে যাওয়ার দুঃখের সঙ্গেই যোগ হল বিষাদের করুণ সুর।দু’দেশের নিরাপত্তা রক্ষীদের কড়া নজরদারির মধ্যে কোনও মতে প্রতিমা বিসর্জন দিয়ে নিজের নিজের দেশে ফিরে গেলেন সবাই। প্রতিবেশী দুটি দেশের মানুষের এই মিলনমেলা দেখতে আজ বসিরহাটের টাকিতে হাজির ছিলেন বহু মানুষ।
নিয়ম-নীতি মেনে সকাল থেকে টাকির পূবেরবাড়ী ঘোষবাড়ি রায়চৌধুরী বাড়ি ব্রাহ্মণ পাড়া সহ প্রাচীন জমিদার বাড়িগুলো প্রতিমা নদীর ঘাটে বিসর্জন দেওয়া হয়। সকালবেলা যাত্রামঙ্গল পাড়ে দেবীকে বরণ ও মিষ্টি খাইয়ে সিঁদুর খেলা ও নাচের মধ্য দিয়ে ছয় বেহারার কাঁধে চড়ে দালানকোঠা থেকে বের করা হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে। ইচ্ছামতি নদীর ঘাট থেকে প্রতিমা নিরঞ্জন শেষ হয়। আর এই দৃশ্য দেখার জন্য রীতিমতো উপচে পড়ে ভিড়। তারপরেই শুরু হয় বারোয়ারি পুজোর প্রতিমা বিসর্জন।