মোদী সরকারের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুর দিনই কানাঘুষো শোনা গিয়েছিল যে ‘আর্থিক সংস্কারের’ নামে নামে এবার এমনই এক সিদ্ধান্ত নিতে পারে কেন্দ্র, যার ফলে কোপ পড়বে দেশের ৪২ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ওপর। অবশেষে বাজেট পেশের দিনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, রেল এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিকে বেসরকারি হাতে তুলে দিতে চাইছে কেন্দ্র। শুরু হয়ে গিয়েছে সেই প্রক্রিয়াও। ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থা ভারত পেট্রলিয়াম কর্পকে (বিপিসিএল) পুরোপুরি বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে মোদী সরকার। বিষয়টি নিয়ে আরও এগোবার আগে চুপচাপ সেই আইন বাতিল করল তারা। যার হাত ধরে সংস্থাটির জাতীয়করণ হয়েছিল। যাতে বেসরকারি বা বিদেশি সংস্থার কাছে সেটি বিক্রি করার আগে সংসদের অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন না পড়ে।
প্রসঙ্গত, এক সময় এই বিপিসিএলের নাম ছিল বার্মা শেল অয়েল কোম্পানি। যার যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯২৮ সালে। ভারতে কেরোসিনের ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে। ধীরে ধীরে সংস্থাটি তার পরের কয়েক বছরের মধ্যে আরও ছড়িয়ে পড়ে দেশের প্রতিটি প্রান্তে এবং পেট্রল পাম্প, লুব্রিকেন্ট, বিমান জ্বালানি ও এলপিজি-ল ব্যবসা শুরু করে। ১৯৭৬ সালে ওই বার্মা শেল গ্রুপ অব কোম্পানিজকেই অধিগ্রহণ করে ভারত সরকার এবং নাম দেয় ভারত পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লিমিটেড। আর ২০০৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল, সংসদ বিপিসিএল এবং হিন্দুস্তান পেট্রলিয়াম কর্পোরেশন (এইচপিসিএল) জাতীয়করণের জন্য পাস হওয়া আইন সংসদ সংশোধন করলে, তবেই বেসরকারিকরণ করা যাবে সংস্থা দু’টিকে।
সরকারি সূত্রের খবর, আইনের খাতায় অপ্রয়োজনীয় ভাবে পড়ে থাকা ১৮৭টি অচল ও অনাবশ্যক আইনকে নাকচ করেছে ২০১৬ সালের বাতিল ও সংশোধনী আইন (রিপিলিং অ্যান্ড অ্যামেন্ডিং অ্যাক্ট অব ২০১৬) । যার মধ্যে আছে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন বার্মা শেল জাতীয়করণের আইনও। কেন্দ্রের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিকের দাবি, ‘ওই আইনটি খারিজ হয়ে গিয়েছে এবং বিপিসিএল-কে বিক্রি করে দেওয়ার জন্য এখন আর সংসদের সায় লাগবে না।’ আসলে রাজস্ব ক্ষতি হবে জেনেও সম্প্রতি কর্পোরেট কর কমানো-সহ নানা পদক্ষেপ করেছে সরকার। এই অবস্থায় রাজকোষ ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখতেই বিপিসিএল-এর মতো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি বিলগ্নিকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। এই পথে ৬৫ থেকে ৭৫ হাজার কোটি রোজগারের আশা। আবার বিলগ্নির জন্য মন্ত্রীসভার যে সায়ের প্রয়োজন হলেও বিপিসিএলের ক্ষেত্রে তার জাতীয়করণ আইন রদ হওয়ায় সেই সায় চাওয়ার আর প্রয়োজন পড়বে না।