দ্বিতীয় মোদী সরকারের প্রথম বাজেট পেশের দিনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, রেল এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিকে বেসরকারি হাতে তুলে দিতে চাইছে কেন্দ্র। ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে সেই কাজ। আগামী নভেম্বরেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় পেশ হতে চলেছে ভারত পেট্রোলিয়াম (বিপিসিএল)-সহ ৪ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণের প্রস্তাব। এই তালিকায় এই তালিকায় শিপিং কৰ্পোরেশন (এসসিআই), টিএইচডিসি ইন্ডিয়া এবং এনইইপিসিও-এর নামও আছে। এই ৪ সংস্থায় সরকারের হাতে থাকা সমস্ত অংশিদারিত্ব বিক্রির পক্ষে ইতোমধ্যেই মত দিয়েছে অমিত শাহের নেতৃত্বাধীন বিশেষ প্যানেল। এছাড়া কন্টেনার কর্পোরেশনের ৩০ শতাংশ ইক্যুইটি বিক্রির পক্ষেও সম্মতি দিয়েছে তারা।
প্রসঙ্গত, বাজপেয়ীর জমানা থেকেই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণের পথ প্রশস্থ হয়। সচিব গোষ্ঠীর এই প্রস্তাব কার্যকর হলে দেশের ইতিহাসে এটি সবথেকে বড় বেসরকারিকরণের ঘটনা ঘটতে চলেছে। গোটা প্রক্রিয়ায় বিলগ্নিকরণ সংক্রান্ত সমস্ত স্ট্যাটেজিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে নোডাল দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ডিপার্টমেন্ট অফ ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড পাবলিক অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ওপরে। এছাড়া আগ্রহপত্র চাওয়ার সংশ্লিষ্ট সমস্ত পক্ষের সঙ্গে সরকার কথা বলবে বলে সূত্রের খবর। আসলে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির শেয়ার বিক্রি করে চলতি আর্থিক বছরে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে সরকার। শুধুমাত্র সরকারি সংস্থার শেয়ার বেচে এই বছর ১,০০০,০০০,০০০,০০০ টাকা (১ ট্রিলিয়ন) ঘরে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সংসদীয় আইন অনুসারে বিপিসিএল গঠিত হয়েছিল। ২০০৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল, সংসদ বিপিসিএল এবং হিন্দুস্তান পেট্রলিয়াম কর্পোরেশন (এইচপিসিএল) জাতীয়করণের জন্য পাস হওয়া আইন সংসদ সংশোধন করলে, তবেই বেসরকারিকরণ করা যাবে সংস্থা দু’টিকে। ফলে আগেভাগেই সেই আইন বাতিল করা হয়েছে, যাতে সংসদের অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন না পড়ে। বর্তমানে বিপিসিএল-এ সরকারের ৫৩.২৯ শতাংশ অংশিদারিত্ব আছে। এছাড়া কন্টেনার কর্পোরেশনে ৫৪.৮ শতাংশ এবং শিপিং কর্পোরেশনে ৬৩.৭৫ শতাংশ অংশিদারিত্ব সরকারের। টিএইচডিসি কেন্দ্র এবং উত্তরপ্রদেশ সরকারের যৌথ অংশিদারিত্ব সংস্থা। এখানে কেন্দ্রের ৭৫ শতাংশ এবং উত্তরপ্রদেশ সরকারের ২৫ শতাংশ অংশিদারিত্ব আছে। নর্থ ইস্টার্ন ইলেকট্রিক পাওয়ার কর্পোরেশন এনইইপিসিও সরকারের মালিকানাধীন।
উল্লেখ্য, চলতি বছরে আর্থিক ঘাটতির হার জিডিপির ৩.৩ শতাংশে বেঁধে রাখার টার্গেট নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু তীব্র মন্দার জেরে প্রত্যাশা মতো কর আদায় হয়নি। এর মধ্যে কর্পোরেট কর হ্রাস করেছে কেন্দ্র। যার ফলশ্রুতিতে কেন্দ্র লক্ষ্য ভ্রষ্ট হতে পারে বলে আশঙ্কা। আর্থিক ঘাটতি সামলাতেই তাই বিলগ্নিকরণ করে টাকা জোগাড়ে মরিয়া হয়ে উঠেছে মোদী সরকার। ভারত পেট্রোলিয়ামের অংশিদারিত্ব বিক্রির ফলে সরকারের ঘরে ৫৪,০৫৫ কোটি টাকা ঢুকতে পারে। আর কন্টেনার কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে তা দাঁড়াতে পারে ১১,০৫১ কোটি টাকা। আবার, শিপিং কর্পোরেশন থেকে ১,২৮২ কোটি টাকাও সরকারের ঘরে ঢুকতে পারে। অর্থাৎ, বিপিসিএল এবং শিপিং কর্পোরেশনের বেসরকারিকরণ এবং কন্টেনার কর্পোরেশনের ৩০ শতাংশ ইক্যুইটি বিক্রির মাধ্যমে মোট ৬৬,৩৮৮ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে পারে কেন্দ্র।