২০১৬ সালে যখন বিধাননগর পুরনিগমের ২০০ কোটি টাকার দুর্নীতির কথা সামনে এসেছিল, তখন তিনিই ছিলেন বিধাননগর পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়র। অন্য রাজ্যের কালো তালিকাভুক্ত সরকারি সংস্থাকে প্রায় ২০০ কোটি টাকার কাজের বরাত দিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন নিগমের প্রাক্তন মেয়র তথা বিজেপি নেতা সব্যসাচী দত্ত৷ এবার নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে সেই বিতর্ক। কারণ সামনে এসেছে বিধাননগর কমিশনারেটে দায়ের করা প্রাক্তন কমিশনারের একটি অভিযোগপত্র।
ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, এই অভিযোগে প্যাঁচে পড়তে পারেন প্রাক্তন মেয়র। কারণ, যে সময়ে ঘটনাটি ঘটেছিল এবং অভিযোগ প্রমাণিত হয়, দু’টি ক্ষেত্রেই মেয়র ছিলেন সব্যসাচী। তারপরই রাজ্য সরকার বিষয়টি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেয়। তাতে ঘটনার সত্যতা প্রমাণ হওয়ার পর ওই কাজের টেন্ডার বাতিল করা হয়।
চলতি বছরের ৪ জুলাই বিধাননগরের তৎকালীন কমিশনার পৃথা সরকার বিধাননগরের পুলিশ কমিশনারকে লিখিত অভিযোগে জানান, ‘২০১৬ সালের মে মাসে যে টেন্ডারের ভিত্তিতে ‘আলো আমার আলো’ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল, তা বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু এ বছরের জুন মাসে কেলট্রন একটি ওয়ার্ক অর্ডার জারি করে অন্য একটি সংস্থাকে রাস্তায় লাগানোর এলইডি আলো-সহ অন্যান্য কাজের বরাত দেয়। ফলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হোক।’ অভিযুক্ত সংস্থাটির নাম কেলট্রন৷
ঘটনার সূত্রপাত ২০১৬ সালের এপ্রিল-মে মাস নাগাদ৷ বিধাননগর পুরনিগমের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ওই এলাকার উন্নয়নের জন্য দু’টি প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে৷ প্রথমটির নাম দেওয়া হয় ‘আলো আমার আলো’৷ এই প্রকল্পে গোটা পুরনিগম এলাকায় পঁচিশ হাজার ল্যাম্পপোস্টে এলইডি আলো লাগানো হবে৷ এই কাজের জন্য প্রাথমিক ভাবে বাজেট ধরা হয়েছিল আনুমানিক ৭০ কোটি টাকা৷ কেরালার ওই সংস্থা ৫৮ কোটি টাকায় ওই কাজের বরাত পায়৷
ঠিক ছিল, ওই পুরো কাজটি করার পর পাঁচ বছরের বিদ্যুত্ থেকে সাশ্রয় হওয়া টাকা তাদের দফায় দফায় মিটিয়ে দেওয়া হবে৷ কিন্তু অভিযোগ ওঠে, রাজ্য সরকারের অর্থ দপ্তরের নির্দেশ না-মেনে ওয়েবসাইটের একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পুরো কাজটি পাইয়ে দেওয়া হয়৷ সেই সরকারি নির্দেশে বলা হয়েছে, পাঁচ লক্ষ টাকার বেশি সরকারি কাজ হলেই ই-টেন্ডার বাধ্যতামূলক৷ এক্ষেত্রে তা হয়নি।
উল্লেখ্য, ঝাড়খণ্ডের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের একটি কাজ সময়মতো শেষ করতে না-পারায় কেলট্রন সংস্থাকে তারা কালো তালিকাভুক্ত করে৷ ফলে নিয়ম অনুযায়ী তারা এই বরাত পাওয়ার ক্ষেত্রে উপযুক্ত নয়। যদিও সে সময় বিধাননগর পুরনিগমের মেয়র হিসেবে সব্যসাচী দত্ত বলেছিলেন, ‘ওরা কালো তালিকাভুক্ত, এখানে তো নয়৷ একটা টেন্ডার কমিটি ওটা পাশ করেছে৷ আমি জানি না৷ তারা তখন বাতিল করল না কেন?’