মিসটেক মিসটেক মিসটেক৷ ২০১৯ এ এসে ১৯৪৭ এর ভুল শুধরে নেওয়া হচ্ছে। ৪৮’ এ
শরীরটা মিটিয়ে ফেলা গেছে। এবার গোটা টা নিশ্চিহ্ন হোক। ভারত আর মার্কিন মানেই এখন গান্ধী আর মার্টিন লুথার কিং নয়। আমরা এখন একে অপরকে ইয়াংকি ভাষার সম্বোধন করি হাউডি বলে।
বন্ধুগণ, মাথা উঁচু করে ২০২২ এ তাকিয়ে দেখুন। দেশের সব কীট বিদেশে চলে গেছে পাকিস্তানে বা ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে ইহুদিদের মতো।
হিন্দু ভেবেছিল মুসলমানদের খেদিয়ে বের করে দিলে ভালোই হবে। কারণ দেশটা হিন্দুস্তান। দেশটা হিন্দুর। তাই হলো।
কিন্তু যে হিন্দু দেশভাগের পরে হিন্দুস্তানে এসেছিল সে দেখলো মুসলমানদের মতোই ব্যবহার করা হচ্ছে তাদের সাথে। যারা করছে তারা ও হিন্দু, তাদের জমি এ দেশে কয়েক শো বছর ধরে আছে। তারা ভাবতে শুরু করলো দেশটা তাদের। কারণ তারাই প্রকৃত ভারতীয়।
ব্রাহ্মণেরা দেখলো যে দেশটা যখন হিন্দুত্বের ভিত্তিতেই বিভাজিত হবে, তবে তারাই তো হবে প্রথম শ্রেণির নাগরিক। কারণ তারাই উচ্চজাতের। দলিতদের সাথে মুসলমানদের মতো ব্যবহার শুরু হলো। দলিতরা ক্রমশ আরেকটা দেশের সন্ধানে বেরিয়ে পরলো।
এসবের মাঝে উত্তর ভারতীয় হিন্দুরা ঠিক করলো যেহেতু রাম ছিল উত্তর ভারতীয় আর দেশটা হিন্দুস্তান, তাদের খাদ্যাভ্যাস, ভাষা, সংস্কৃতি গোটা দেশে লাগু করা হোক। এক দেশ, এক আইন, এক ভাষা, এক খাদ্যাভ্যাস হলেই ভালো।
দক্ষিণ ভারতীয়রা বিদ্রোহ ঘোষণা করলো। ভারতের প্রাচীনতম নাগরিক তারাই নাকি, তামিল বিশ্বের প্রাচীনতম ভাষার একটা। এ দেশ ওদেরই। বরং আর্যরা বাইরের থেকে এসেছে। রাম ও আর্য। মানে বহিরাগত৷
পূর্ব আর উত্তর পূর্ব ভারতের লোকেরা দেখলো তাদের কোন একটি পক্ষ নিতে হচ্ছে না হলে তারা তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে থাকবে এ দেশে। আদিবাসী সমাজ দেখলো তাদের অন্যদের মতো অভিনয় করতে বলা হচ্ছে, ভারতের সভ্যতার কাছাকাছি সময় ধরে চলে আসা তাদের সভ্যতা বিপদের সম্মুখীন। তারা আলাদা দেশ দাবি করে বসলো। আরুনাচল, নাগাল্যান্ড ঠিক করলো চীনের সাথে মিশে যাবে।
বাংলার মানুষ স্বাধীনতার সময়ে যে ভাবে দুপক্ষ নিয়েছিল, এবার ও তাই নিলো। একদল পা চেটে রায় বাহাদুর হওয়ার আশায় সরকার বাহাদুরের সমর্থন দিলো আর এক পক্ষ জঙ্গি আন্দোলন শুরু করলো অবিভক্ত বাংলার দাবিতে। দুই বাংলাকে মিশিয়ে দেওয়ার আন্দোলন মাথা চাড়া দিলো, ভাষা-মৌলবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে সরকার জরুরি অবস্থা জারি করলো পাঞ্জাব আর বাংলাতে।
যারা প্রান্তিক, যারা চামার, ডোম, অচ্ছুৎ, তারা ফের কোন অবলম্বনের আশাতে ছুটলো ভন্ড বাবার আশ্রমে। এই বাবার আশ্রমেই বেআইনি অস্ত্র, মাদক পাওয়া যাবে। তারপর ভীষণ যুদ্ধ হবে। একে অপরের সাথে লড়াই করবে। প্রিয় ট্রাম্প বন্ধুর দেশ অস্ত্র জুগিয়ে যাবে। আমরা পাকিস্তানের মতো যুদ্ধ করবো।
পাকিস্তানিরা ৭৫ বছর পরে উপলব্ধি করছে যে ওদের দেশে একটা গান্ধী, নেহেরু বা আম্বেদকর ছিল না। ওদের কেউ ছিল না যে রাতের পর রাত দাঙ্গা দমন করতে অনশন করবে, কেউ ওদের বলেনি যে স্বাধীনতার পরে গোলা বারুদ নয়, প্রথম কাজ আইআইটি, আইআইএম,এইমস, ইসরোর মতো সংস্থা তৈরি করা যাতে আগামী প্রজন্ম শক্তিশালী হতে পারে।
আমরা অবশ্য গান্ধীকে যতটা চটপট ভুলে যেত পারি ততোই মঙ্গল। পাকিস্তানের মতো সব দিক দিয়ে পিছিয়ে পরা এক দেশের সাথে প্রতিযোগিতায় নেমেছি, কে আগে সিরিয়া হতে পারি। অবশ্য সিরিয়াতে গান্ধীর কী কাজ? ‘বৈষ্ণব জন তো’ তে ‘হাউস দা জোশ’ এর উগ্র জাতীয়তাবাদ কই?
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত