১৮৬০ সাল।
শীতের প্রারম্ভে বৃক্ষ থেকে খসে পড়া পাতার মতন তখন অনবরত চিঠি আসছে মধুসূদনের কাছ থেকে। বিদ্যাসাগরকেই তখন একমাত্র অবলম্বন করেছেন মধুসূদন, প্রবাসে গ্রহ-বৈগুণ্যে বিষম দারিদ্র্য ও অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়ে তিনি বুঝেছেন, ঐ জেদী ব্ৰাহ্মণটি শুধু বিদ্যার সাগর নন, করুণাসাগরও বটে। আর যাঁদের তিনি বন্ধু বলে মনে করেছিলেন, তাঁরা সবাই বিমুখ করেছেন, একমাত্র বিদ্যাসাগরের কাছ থেকেই সাহায্য এসেছে বিনা শর্তে।
রাজা দিগম্বর মিত্র ছিলেন মধুসূদনের বাল্য সুহৃদ, দেশের বিষয়সম্পত্তির ব্যাপারে মধুসূদন তাঁর ওপরেই নির্ভর করেছিলেন সবচেয়ে বেশী, সেই দিগম্বর মিত্রই তাঁর সর্বনাশের পথ সুগম করেছিলেন। অর্থ প্রেরণ করা তো দূরের কথা, একটা চিঠিরও উত্তর তিনি দিতেন না। অথচ এই রাজা দিগম্বর মিত্রকেই তিনি মেঘনাদবধ কাব্য উৎসর্গ করেছিলেন!
স্ত্রী-পুত্র-কন্যাকে দেশে রেখে একাই লণ্ডনে পাড়ি দিয়েছিলেন মধুসূদন। স্ত্রী হেনরিয়েটার সংসারের ভরণপোষণের জন্য যে অর্থ বরাদ করে দিয়ে গিয়েছিলেন সম্পত্তির পত্তনীদারদের কাছে, তাঁরা সে অর্থ নিয়মিত দিত না। তাই নিরুপায় হয়ে হেনরিয়েটা পুত্র-কন্যাকে নিয়ে চলে গেলেন লণ্ডনে।
বিপদ তাতে বৃদ্ধি পেল শতগুণ।
মধুসূদনের ব্যারিস্টারি পড়ার ব্যয় ছাড়াও এত বড় একটি সংসার চালানো একেবারে অসম্ভব হয়ে পড়লো। নিতান্ত খাদ্যচিন্তা ছাড়া আর কোনো চিন্তার অবকাশ রইলো না।
ইংল্যান্ডের তুলনায় ফরাসী দেশে জীবনধারণ-ব্যয় কিঞ্চিৎ কম বলে মধুসূদন সদলবলে চলে এসেছিলেন প্যারিসে। কিন্তু যখন হাতে একটি মুদ্রাও থাকে না, তখন কোন দ্রব্যের মূল্য কত সে বিচারে লাভ কী?
অবস্থা পৌঁছলো একেবারে চরমে। শিশু পুত্র-কন্যা অনাহারের কষ্টে রোদন করে, পিতা হয়ে মধুসূদনকে তা দর্শন করতে হয়। তিনি রাজনারায়ণ দত্তের পুত্র, মুখে সোনার চামচ নিয়ে যাঁর জন্ম, যিনি যৌবনে-কৈশোরে খোলামকুচির মতন দু হাতে মুদ্রা ছড়িয়েছেন, তখন তাঁর নিজ সন্তান-সন্ততির এই দশা!
যদিও তখনও দেশে তাঁর যথেষ্ট সম্পত্তি ছিল, সুন্দরবনের এক আবাদ থেকেই বার্ষিক আয় হত দশ সহস্ৰ মুদ্রা। কিন্তু, শুধু স্বদেশবাসীর বিশ্বাসঘাতকতায় বিদেশে তিনি মরণাপন্ন হলেন।
‘দত্ত কারো ভৃত্য নয়’, এই দম্ভোক্তি যাঁর মুখে সর্বদা শোনা যেত, তখন সেই তাঁকেই সামান্য ভিখারীর মতন চ্যারিটেবল সোসাইটিতে গিয়ে হাত পাততে হয়।
নিজস্ব জিনিসপত্র বিক্রয় ও বন্ধকী দিতে দিতে আর কিছুই বাকি ছিল না। নবীনকুমার সিংহ প্রদত্ত একটি রৌপ্য পাত্র ছিল মধুসূদনের অতি প্রিয়, সেটি শেষ পর্যন্ত রেখে দিয়েছিলেন। স্বদেশে তাঁর কাব্য রচনার স্বীকৃতিতে একমাত্র সংবর্ধনা সভায় তিনি এটা পেয়েছিলেন। তবু একদিন সেটিকেও তাঁকে নিয়ে যেতে হয়েছিল বন্ধকী দোকানে। সেটির বিনিময়ে যে অর্থ পাওয়া গিয়েছিল, তাতে পুত্র-কন্যাদের কয়েকদিনের দুগ্ধের খরচ সঙ্কুলান হয়েছিল।
অন্য সকলের কাছ থেকে হতাশ হয়ে তারপরই মধুসূদন সাহায্যের আবেদন করেছিলেন বিদ্যাসাগরের কাছে। কিন্তু এমন যে অপ্রত্যাশিত ফল হবে, তিনি তা স্বপ্নেও আশা করেন নি।
কোনো রকম জামিন ছাড়াই তাঁকে টাকা পাঠিয়েছিলেন বিদ্যাসাগর। কলকাতায় তখন এত সব মহা মহা ধনী ব্যক্তি, তাঁদের তুলনায় বিদ্যাসাগর কী আর! অতি লোভনীয় সরকারী চাকুরি ছেড়ে দিয়ে বসে আছেন বিদ্যাসাগর, তখন তাঁর যাবতীয় আয় শুধু গ্ৰন্থ বিক্রয় থেকে। জমিদার বা ধনীরা কেউ নয়, গদ্য গ্ৰন্থকার বিদ্যাসাগরই শুধু সাহায্য করেছিলেন কবি মধুসূদনকে।
কিন্তু তাতেও যে চলে না।
বিদ্যাসাগরের কাছ থেকে দুই তিন সহস্র টাকা আসত, আর দু-এক মাসের মধ্যেই তা উড়ে যেত। তখন আবার তাঁকে লিখতে হত কাকুতি-মিনতিপূর্ণ পত্র।
তখন মধুসূদনের সমস্ত প্রতিভা নিয়োজিত হয়েছিল করুণা-নিষ্কাষণী পত্র রচনায়। বিদ্যাসাগরকে খুশী করবার জন্য তিনি ইংরেজি চিঠির মধ্যে মধ্যে কয়েক ছত্র লিখতেন বাংলা অক্ষরে, বিদ্যাসাগর ভারতচন্দ্রের কাব্য পছন্দ করতেন বলে প্রায়ই ভারতচন্দ্রের রচনার উদ্ধৃতি দিতেন। ফ্রান্সের শীতের বর্ণনা দিতে গিয়ে ভারতচন্দ্রের ভাষায় বলেছিলেন, ‘বাঘের বিক্রম সম মাঘের হিমানী’।
বিলাতি পত্র-পত্রিকায় কখন কোথায় বিদ্যাসাগর সম্পর্কে সংবাদ প্ৰকাশিত হয়, সে খবরও জানতেন সাগ্রহে। একদিন প্যারিসের এক দোকানে দেখেছিলেন বিদ্যাসাগরের লেখা কয়েকটি বই। দারুণ গর্ব হয়েছিল মধুসূদনের। দোকানদারকে বলেই ফেলেছিলেন, এই লেখক আমার বিশিষ্ট বন্ধু। তাই শুনে দোকানদার বলেছিলেন, ‘এই লেখক এখন জীবিত নেই!’
মধুসূদন আঁতকে উঠে বলেছিলেন, ‘কী সাঙ্ঘাতিক কথা! না, না, তাঁর দেশ এবং তাঁর সুহৃদরা তাঁর বিয়োগ সহ্য করতে পারবেন না।’
সনির্বন্ধ পত্র প্রেরণ করলে বিদ্যাসাগর ঠিক নির্দিষ্ট সময়ে টাকা পাঠাবেনই, এরকম একটা সংস্কারের মতন বদ্ধমূল বিশ্বাস শেষপর্যন্ত হয়ে গেল মধূসূদনের। তখনকিছুদিনের জন্য তিনি সপরিবারে এসে রয়েছেন ভাসাঁই নগরীতে, বিদ্যাসাগর প্রেরিত অর্থ দ্রুত নিঃশেষিত হতে চলেছে, আবার সাহায্যের আবেদন করে পাঠানো হয়েছে পত্র।
এক সকালে মধুসূদন কিছু পড়াশুনোর চেষ্টা করছেন, এমন সময় হেনরিয়েটা অশ্রুপরিত নয়নে এসে বললেন, ‘আর যে পারি না! এভাবে আর কতদিন বেঁচে থাকতে হবে!’
নতুন কী আবার হলো?
ব্যাপার অতি সামান্য, কিন্তু বড়ই মর্মভেদী। তাঁদের বাসগৃহের সন্নিকটেই ধুমধাম করে একটি বেশ বড় মেলা বসেছে। পল্লীর সব শিশুরা ছুটে চলেছে সেদিকে। তাই দেখে হেনরিয়েটার পুত্র-কন্যাও সেই মেলায় যাবার জন্য বায়না ধরেছে। অবোধ শিশু, ওদের কীভাবে নিরস্ত করা যাবে?
কিছু না ভেবেই মধুসদন বললেন, ‘যাবে না কেন, যাক না। মেলা দেখে আসুক।’
হেনরিয়েটার বিলাপ উচ্চতর হলো। তাঁর হাতে রয়েছে মাত্র তিন ফ্রাঁ, তা দিয়ে কিছু কেনাকাটা তো দূরের কথা, মেলার প্রবেশ মূল্যই যে ওর চেয়ে বেশী।
একটুক্ষণ গুম হয়ে বসে রইলেন মধুসূদন। তিনি অক্ষম পিতা, আজ প্রাতে নিজের সন্তানদের মুখে হাসি ফোটাবার মতন সাধ্য তাঁর নেই।
উপায়ান্তর না দেখে তিনি বলে উঠলেন এক সময়, ‘একটু অপেক্ষা করো, দেখো, আজই নিশ্চিত বিদ্যাসাগরের নিকট থেকে অর্থ এসে পৌঁছোবে! তিনি কি যে সে মানুষ! তাঁর প্রতিভা ও প্রজ্ঞা প্রাচীন ঋষিদের মতন, তাঁর কর্মোদ্যম ইংরেজদের মতন আর তাঁর হৃদয়খানি বাঙালী মায়ের মতন! তিনি ঠিকই বুঝবেন!’
এমনই কাকতালীয় যোগাযোগ, এক ঘণ্টার মধ্যেই ডাকে এলো বিদ্যাসাগরের এনভেলাপ, তার মধ্যে দেড় হাজার টাকা!
নিয়মিত বিদ্যাসাগর প্রেরিত অর্থে মধুসূদন সাংসারিক অনটন কিছুটা সামলে উঠে আবার পড়াশুনোর কথা ভাবতে লাগলেন। ইতিমধ্যে কয়েকটি ভাষা শিক্ষা করেছিলেন শখ চরিতার্থ করবার জন্য, কিন্তু তাতে তো উদরান্নের সংস্থান হবে না! অনিশ্চিতকাল ধরে প্রবাসে থাকাও সম্ভব নয়, আর দেশে ফেরার আগে ব্যারিস্টারি পাশ না করলে ফিরে গিয়েও তো সেই একই অবস্থায় পড়তে হবে।
দেবেন্দ্রনাথ পুত্র সত্যেন্দ্র সসম্মানে আই সি এস পরীক্ষায় পাশ করে সকলকে চমকিত করে দিয়েছিলেন। সাহেবদের সঙ্গে পরীক্ষা দিয়ে তিনিই প্রথম ভারতীয় আই সি এস হন। সত্যেন্দ্ৰ যথেষ্ট মেধাবী ছিলেন বটে, তা ছাড়া ধনীর সন্তান, তাঁকে পড়াশুনোর সময় অর্থচিন্তা করতে হয়নি। সত্যেন্দ্রনাথের এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পরে একটা খবরও রটেছিল যে, সত্যেন্দ্ৰ আই সি এস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় ইংরেজ কর্তৃপক্ষ নাকি শঙ্কিত হয়ে ঐ পরীক্ষার মান আরও কঠিন করার কথা চিন্তা করছেন। ভারতীয়রা করবে ইংরেজদের সঙ্গে সমান পদে চাকুরি!
মধুসূদন সেটা শুনে ভয় পেলেন, তা হলে কি ব্যারিস্টারি পরীক্ষাও আরও কঠিন হয়ে যাবে? ভারতের বিভিন্ন নগরে, বিশেষত কলকাতার সুপ্রিম কোর্টে ইংরেজ ব্যারিস্টারদের তখন উপার্জন যথেষ্ট, সেখানে কি তাঁরা সহজে ভারতীয়দের প্রতিযোগিতায় নামতে দেবে? সুতরাং, দ্রুত ব্যারিস্টারি পাশ করতে গেলে বিদ্যাসাগরের কাছ থেকে আরও অর্থ চাই। তাঁর সমস্ত সম্পত্তি বিক্রয় বা বন্ধক দেবার অধিকার দিয়ে বিদ্যাসাগরের নামে পাঠিয়ে দিলেন এক ওকালতনামা।
ওদিকে মধুসূদনের চিঠিপত্র এবং সংবাদাদি পাঠ করে শুধু করুণ রস নয়, মাঝে মাঝে কৌতুকও পেতেন বিদ্যাসাগর। একদিন তিনি কয়েকজন বন্ধুকে বললেন, ‘ওহে, তোমাদের অমিত্ৰাক্ষরের কবির আর একটি নতুন খবর শুনেছে? ফরাসী দেশের পুলিস নাকি তাঁকে পলাতক ধুন্ধুপন্থ নানাসাহেব বলে সন্দেহ করেছে!’
সকলে বিস্মিত।
যদিও কাহিনীটি একেবারে অলীক ছিল না।
১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের প্রধান নায়ক নানা সাহেবকে তখনো বন্দী করতে পারে নি ব্রিটিশ ফৌজ। প্রায়ই তাঁর সম্পর্কে বিভিন্ন প্রকার গুজব রটে। বিদ্রোহ প্রশমনের পর সাত-আট বৎসর পার হয়ে গেলেও ইংরেজ সরকার তখনও তাঁর অনুসন্ধানে তল্লাসী চালিয়ে যাচ্ছিল। পাওনাদারবৃন্দের ভয়ে মধুসূদন প্রায় সময়ই গৃহের মধ্যে লুকিয়ে থাকতেন, বাইরে নির্গত হতেন কদাচিৎ। সেইজন্য ফরাসী পুলিসের মনে সন্দেহের উদয় হলো। এই কৃষ্ণবর্ণ, স্থূলকায়, মুখ গুম্ফ-দাড়িতে ভরা ব্যক্তিটিই ছদ্মবেশী নানাসাহেব নন তো!
মধুসূদনের আর এক পত্রে বিদ্যাসাগর জানতে পারলেন যে, প্রখ্যাত পণ্ডিত গোল্ডস্ট্রকার সাহেব মধুসূদনকে অনুরোধ করেছেন, লণ্ডন ইউনিভার্সিটি কলেজে বাংলার অধ্যাপক পদ গ্রহণ করবার জন্য। পদটি অতি সম্মানের হলেও অবৈতনিক।
ব্যারিস্টারি পাঠ শেষ করার জন্য মধুসূদন তখন প্যারিস থেকে চলে এসেছেন লণ্ডনে। কিন্তু গোল্ডস্ট্রকার মহোদয়ের অনুরোধ মান্য করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। শুধু সম্মান নিয়ে তিনি ধুয়ে খাবেন! এক প্রকার বিষাক্ত কীটের আক্রমণে ব্রিটেনে গবাদি পশুর মড়ক শুরু হয়েছে বলে বর্তমানে সকল প্রকার মাংসই অগ্নিমূল্য, অন্তত মাসিক সাড়ে তিনশো টাকার কমে সংসার চালানো দুঃসাধ্য। এই টাকা তাঁকে কে দেবে?
চিঠিখানি পড়ে বিদ্যাসাগর একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলেছিলেন। লণ্ডন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে বাংলা অধ্যাপকের পদ অলংকৃত করবেন একজন বিশিষ্ট বাঙালী কবি, এটাই তো স্বাভাবিক, কিন্তু ইংরেজ সরকার সে জন্য কোনো পারিশ্রমিক দিতে অপরাগ! আর এ দেশ থেকেই বা কে সাহায্য করবেন। তিনি কতকাল একার চেষ্টায় চালিয়ে যেতে পারবেন? সে চেষ্টাও অবাস্তব।
ভিতরে ভিতরে বিদ্যাসাগর যে ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলেন, তা কেউই বুঝতেন না। দাতা হিসেবে একবার নাম রটে গেলে তার বিড়ম্বনাও কম নয়। তখন আর কারুকে বিমুখ করার উপায় নেই। দশজনকে দান করার পর একজনকে ফিরিয়ে দিলে সেটাই লোকে বড় করে দেখবে। তিনি বুঝতে পারতেন, অনেকে তাঁর সঙ্গে তঞ্চকতা বা বঞ্চনা করে টাকা নিয়ে যায়। পিতৃদায়ের অজুহাতে যে ব্যক্তি অর্থ সাহায্য নিয়ে যায়, সে-ই পরে ইয়ার বক্সীদের নিয়ে মদ্যপান করে। যে সব অনাথিনী যুবতীদের জন্য তাঁর মাসিক সাহায্য বরাদ্দ ছিল, অকস্মাৎ তিনি এক সময় জানতে পেরেছিলেন, তাঁদের কেউ কেউ বেশ্যাবৃত্তিতে নিযুক্ত।
এর চেয়েও সাঙ্ঘাতিক কথা, সত্যিকারের কোনো কোনো অভাবী ব্যক্তি বিদ্যাসাগরের কাছ থেকে সাহায্য পেয়ে সঙ্কটমুক্ত হবার পর তাঁরাই বিদ্যাসাগরকে আড়ালে নিন্দা-মন্দ করত। কৃতজ্ঞতা একটা বিষম বোঝা। অনেকেই সারা জীবন এ বোঝা বহনে অক্ষম। তাই এই বোঝা ঝেড়ে ফেলে, উপকারী ব্যক্তির শক্ৰতা করে তাঁরা স্বস্তি বোধ করে। বিদ্যাসাগর এটা বুঝতে পারতেন, তবু প্রত্যেকবার তাঁর মনে নতুন করে আঘাত লাগত।
দান কখনো নিঃস্বর্থ হয় না। তার বিনিময়ে আত্মশ্লাঘার সুখ অনুভব করা যায়। বিশেষত দরিদ্র অবস্থা থেকে যিনি প্রাচুর্যের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, তাঁর দানের মধ্যে কিছু অহমিকা থেকেই যায়। বিদ্যাসাগর ধর্মভীরু বা পুণ্যলোভী ছিলেন না, সুতরাং তিনিও দান করতেন আত্মসুখের জন্যই। যদিও অপরের দুঃখের কথা শুনে তাঁর চক্ষে জল আসত, কিন্তু এমন অশ্রুপাতও তাঁর কাছে ছিল সুখের।
(তথ্যসূত্র:
১- সেই সময় (অখণ্ড) (পটভুমিকা ১৮৪০ থেকে ১৮৭০), সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (নীললোহিত), আনন্দ পাবলিশার্স (২০১৪)।
২- বিদ্যাসাগর, শিবাপ্রশন্ন ভট্টাচার্য, রচয়িতা (২০১০)।
৩- বিদ্যাসাগর: নানা প্রসঙ্গ, রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য, চিরায়ত প্রকাশন (২০১১)।
৪- বিদ্যাসাগর ও বাঙালী সমাজ, বিনয় ঘোষ।
৫- যুগপুরুষ বিদ্যাসাগর, বিনয় ঘোষ।
৬- মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বিপ্লব বালা, প্রথমা প্রকাশন (২০১৫)।
৭- মাইকেল মধুসূদন দত্ত, সুনির্মল বসু, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র (২০১৬)।
৮- একেই কি বলে সভ্যতা? সভ্যতার দুই মুখ, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, করুণা প্রকাশনী (২০১২)।
৯- মাইকেল মধুসূদন দত্ত প্রসঙ্গে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিশ্বভারতী।)
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত