টালা ব্রিজ আনফিট সার্টিফিকেট পাওয়ার পরেই সেখান দিয়ে লরির মতো ভারী যান চলাচল বন্ধ করা হয়েছিল। গতকাল থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বাস চলাচলও। রবিবার এমনিতেই বড় ও ভারী যান সপ্তাহের অন্য দিনগুলোর তুলনায় অনেকটাই কম চলে। তার উপর সকাল থেকেই তুমুল বৃষ্টি। এই দুই কারণের জন্যই ট্র্যাফিকের চাপ কালকে সে ভাবে সামলাতে হয়নি পুলিশকে। কিন্তু আজ সকালে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিন থেকেই বিস্তীর্ণ ওই অঞ্চল যানজটে হাঁসফাঁস করতে থাকে। যশোর রোড, নাগেরবাজার এলাকায় গাড়ির চাপে মন্থর গতিতে এগিয়েছে গাড়ি। যা নিয়ে ব্যাপক ক্ষুব্ধ নিত্যযাত্রী থেকে সাধারণ মানুষ।
আর পুজোর আগে উত্তর কলকাতার মূল সংযোগকারী ব্রিজের এই অবস্থায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পুজোর বাজার। আর এই কারণেই পুজোর পর, ১১ অক্টোবর পর্যন্ত টালা ব্রিজ দিয়ে বাস চালাতে চাইছে রাজ্য। কিন্তু রাজ্যের এই অনুরোধ মানতে চাইছে না কেন্দ্রীয় সংস্থা রাইটস। সেতু পরীক্ষা করে তারা ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে, টালা ব্রিজের বর্তমানে যা পরিস্থিতি, তাতে কোনওভাবেই ওই ব্রিজ দিয়ে বাস বা ভারী যান চলাচল সম্ভব নয়।
তবে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত রাজ্য বাস চালাতে চাইলেও যাত্রীদের নিরাপত্তার সঙ্গে কোনও আপোষ করতে চায় না রাজ্য সরকার। এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আগামীকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার নেওয়া হবে। রবিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ তোলেন, ‘বলছে যে টালা ব্রিজ যে কোনও দিন ভেঙে যাবে। ৫০ বছর ৬০ বছর ৭০ বছর আগে এক-একটা করেছে। তার পরে কোনও পরীক্ষা করেনি, রক্ষণাবেক্ষণ করেনি। কোনও কাগজপত্র পাওয়া যাচ্ছে না। যখন ইঞ্জিনিয়ারদের বলছি কী পরিস্থিতি খতিয়ে দেখো, তখন ওরা বলছে কাগজই তো নেই, ওপর থেকে কিছু বোঝা যাবে না কতটা ক্ষতি হয়েছে ভিতরে। এই পরিস্থিতিতে ঝুঁকিও নেওয়া যাচ্ছে না, হুট করে যদি বিপদ হয়ে যায়।’
কিন্তু পুজোর আগে এই ব্রিজ একেবারে বন্ধও করে দেওয়া যাচ্ছে না, মানুষ তা হলে কোথায় যাবে? এত লক্ষ লক্ষ মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। ট্র্যাফিক বিপর্যস্ত হবে। সবকিছু ভেবেচিন্তে মানুষের পক্ষে যেটা হবে, সেই সিদ্ধান্তই নেওয়া হবে, এমনটাই জানানো হয়েছে নবান্নের তরফে।
কী করে যানজট এড়িয়ে মসৃণ ভাবে যান চলাচল বজায় রাখা যায়, আপাতত সেই পরিকল্পনাতেই ব্যস্ত পুলিশ। চিড়িয়ামোড়, দমদম রোডের বাজার এলাকা এবং নর্দার্ন অ্যাভিনিউয়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকছে। গ্যালিফ স্ট্রিট থেকে শোভাবাজার স্ট্রিটের দিক বরাবর রবীন্দ্র সরণি বন্ধ রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। বিধান সরণি ধরে আসা বাস ও মিনিবাস শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড় থেকে ভূপেন বসু অ্যাভিনিউ ও আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এতকিছুর পরেও সুরাহা মেলেনি। নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের। এই সপ্তাহের শেষ থেকেই পুজো শুরু। এখনই পুজোর আমেজ লেগে গেছে গোটা শহরে। তাই পুজোতে যাতে সাধারণ মানুষের কোনো অসুবিধা না হয়, সেটার দিকে নজর রাখাই আপাতত প্রধান লক্ষ্য প্রশাসনের।