চলতি মরশুমে বর্ষা বড় খামখেয়ালী। তাই বাদল দিনে খিচুড়ি আর ইলিশ মাছ ভাজা সেইভাবে রসনা তৃপ্ত করতে পারেনি খাদ্যরসিক বাঙালির। তবে বঙ্গে যে শুধু বর্ষারই ঘাটতি দেখা গিয়েছে তাই নয় এবার সেভাবে দেখা মেলেনি ইলিশেরও। কিন্তু সামনেই উৎসবের মরশুম। আর দুর্গাপুজোয় বাঙালির পাতে ইলিশ পড়বে না তা আবার হয় নাকি! তাই সে কথা মাথায় রেখে খাদ্যরসিকদের জন্য অঢেল ইলিশ পাঠানোর ছাড়পত্র দিল বাংলাদেশ সরকার। দুর্গাপুজোয় প্রতিবেশী রাষ্ট্রে ৫০০ টন ইলিশ রফতানির অনুমোদন দিয়েছে ঢাকার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আজ, শনিবারেই প্রথম খেপে রাজ্যে পা রাখছে পদ্মার ইলিশ।
বেনাপোল শুল্ক দপ্তরের ক্লিয়ারিং এজেন্ট সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার থেকেই বাংলাদেশ থেকে ইলিশ ঢুকবে ভারতে। ১০ অক্টোবরের মধ্যে ৫০০ টন ইলিশ আমদানি হবে। ৫০০ টন সম্পূর্ণ হয়ে গেলেই তা বন্ধ হয়ে যাবে। একটি সূত্রের খবর, ৫০০ টনের পরেও ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দিতে পারে বাংলাদেশ সরকার। ফলে ইলিশ নিয়ে দুই দেশের টানাপোড়েন আর থাকবে না। সহজ হবে ইলিশের আমদানি রপ্তানি সম্পর্ক।
সূত্রে জানা গিয়েছে, ছোট ইলিশের দাম হতে পারে কেজি প্রতি ৭০০-৮০০ টাকা। মাঝারি ইলিশের দাম ১৬০০-১৭০০ টাকা। বড় সাইজের ইলিশ দুই হাজার টাকা বেশি হবে। যত বড় সাইজ হবে, ততই দাম বাড়বে। সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশ সরকার বৈধভাবে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করলেও ‘ঘুরপথে’ অর্থাৎ অবৈধভাবে ইলিশ আসত ভারতে। তাতে ‘খোকা’ ইলিশের সংখ্যাই থাকত বেশি। সেই ইলিশই গত কয়েক বছরে বাঙালির পাতে থাকত। পুজোতে ৫০০ টন ইলিশের অনুমোদনে মৎস্য ব্যবসায়ীদের হাসি চওড়া হয়েছে। খুশি হয়েছেন দুই দেশের আমদানি ও রপ্তানিতে যুক্ত থাকা ব্যবসায়ীরা।
বেনাপোল শুল্ক দপ্তরের ক্লিয়ারিং এজেন্ট সংগঠনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, ৫০০ টনের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এটা পুজো উপহার। তবে এরপরেও ইলিশ আসবে। তাতে নিষেধাজ্ঞা জারি নাও করতে পারেন শেখ হাসিনার সরকার। শনিবার থেকেই প্রথম দফার ইলিশ ঢুকে যেতে পারে। ১০ অক্টোবরের মধ্যে পুরোটাই আসবে। কার্তিকবাবু বলেন, এই আমদানি জারি থাকুক। আবার বন্ধ হয়ে গেলে ইলিশ-প্রিয় বাঙালির মন খারাপের পারদ চড়বে।
বছর চারেক আগে ঢাকায় গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে রাজ্যে ইলিশ না পাওয়ার অনুযোগ করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময় মমতা জানিয়েছিলেন, পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের ইলিশ খুবই কম জোগান যায়। বুধবার মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ তথ্য আধিকারিক আব্দুল লতিফ বকসী জানান, বাংলাদেশের একজন রফতানিকারকের আবেদনের প্রেক্ষিতে এই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।ইলিশ পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের কাছে প্রিয় হলেও দেশের চাহিদা বিবেচনায় বিভিন্ন সময় তা রফতানি বন্ধ রাখে বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু এবার পুজোর কথা মাথায় রেখে ইলিশ রফতানির অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ। তাই পুজোর আবহে পাতে ইলিশের টুকরো পড়া শুধু সময়ের অপেক্ষা।