১৯৮৪ সালে ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পর সহানুভূতির হাওয়ায় দমদমের নীরেন ঘোষের মতো প্রবাদপ্রতীম কমিউনিস্ট শ্রমিক নেতাও যখন পরাস্ত হয়েছিলেন, সে বারই প্রথম সিপিএমের প্রতীকে আরামবাগ আসন থেকে লোকসভায় নির্বাচিত হন তিনি। তার পর থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ছিলেন টানা সাংসদ। যার ফলে সে সময় আরামবাগের রাজনৈতিক সমীকরণ থেকে শুরু করে দলের ভাগ্যের চাকা- সবকিছুই নির্ধারণ করতেন সিপিএমের এই দাপুটে নেতা প্রয়াত প্রাক্তন সাংসদ অনিল বসু। কিন্তু, ২০১২ সালে দলের সঙ্গে কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য ও বিরোধ চরমে পৌঁছালে আলিমুদ্দিন তাঁকে দল থেকে বহিস্কার করে। তারপর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তিনি বহিষ্কৃতই ছিলেন। তবে মৃত্যুর পরও অনিল বসুর ভূত সিপিএমকে তাড়া করে চলেছে।
একজন মৃত মানুষও যে একটা দলের মধ্যে নীতিগতভাবে পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। ভিতরে জমে থাকা ছাই চাপা আগুন ফের জ্বলে উঠতে পারে এই আশঙ্কায় আশঙ্কিত বর্তমান হুগলি জেলা সিপিএম নেতৃত্ব। তাই আগে ভাগেই হুগলি জেলা সিপিএমের পক্ষ থেকে সার্কুলার পাঠিয়ে প্রয়াত বহিষ্কৃত নেতার স্মরণসভায় না যাওয়ার জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আর এই সার্কুলারকে কেন্দ্র করে আলিমুদ্দিনে অন্তর্কলহ শুরু হয়ে গেছে। পার্টির নেতারাই বলাবলি শুরু করেছেন, পার্টি করলে কি কারোর ব্যক্তিগত মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে না।
বিতর্কের সূত্রপাত্র হয়েছে মূলত প্রয়াত অনিল বসুর স্মরণসভা আয়োজনকে ঘিরে। চুঁচুড়া থেকে প্রকাশিত সমকাল ও বিবৃতি পত্রিকার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন প্রয়াত অনিল বসু। হুগলি-চুঁচুড়া বইমেলার প্রতিষ্ঠাও হয়েছিল তাঁর হাত ধরে। সেই কথা মাথা রেখে আগামী ২ অক্টোবর ওই পত্রিকা ও বইমেলা কমিটির পক্ষ থেকে প্রয়াত নেতার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে একটি স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছে। কিন্তু, সেই স্মরণসভায় দল থেকে বহিষ্কৃত আরেক নেতা সুশান্ত ঘোষকে প্রধান বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ জানানোর পরেই অনিল বসুর স্মরণসভায় যাতে কোনও পার্টি সদস্য না যান তার জন্য রীতিমতো সার্কুলার জারি করে সতর্ক করা হয়েছে।
ওই সার্কুলারে বলা হয়েছে, চুঁচুড়ার একটি সংগঠন অনিল বসুর মৃত্যু দিবসে পার্টিরই কিছু সদস্যদের অংশগ্রহণ করার জন্য চিঠি দিচ্ছে। দল এক্ষেত্রে মনে করছে পরিকল্পিতভাবে পার্টিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্যই এটা করা হচ্ছে। তাই পার্টি সদস্যদের উদ্দেশ্যে সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়েছে, তাঁরা যেন ওই স্মরণসভায় না যান। মৃত্যুদিন পর্যন্ত বহিষ্কৃত কোনও পার্টি সদস্যের মৃত্যুদিবস বা জন্মদিনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা যায় না। এই সার্কুলারের পরই সিপিএমের একটা অংশ অত্যন্ত বিরক্ত দলীয় নেতৃত্বের ওপর। কিন্তু পার্টির এই সার্কুলারকে হুইপ জারির সমতুল্য মনে করছেন অনেক ‘কমরেড’ই। তাঁদের বক্তব্য, দল যদি এইভাবে কারোর ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ শুরু করে তবে এখনও যেটুকু সিপিএমের অস্তিত্ব আছে আগামী দিনে তাও থাকবে না। কেউ কেউ আবার প্রকাশ্যেই এ নিয়ে মুখ খুলেছেন। সবমিলিয়ে এই ঘটনার ফলে যে আলিমুদ্দিনেও ছড়িয়ে পড়েছে অন্তর্কলহের আগুন, তা বলাই বাহুল্য।