১৯৩৯ সালে স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগে যাত্রা শুরু। তারপর প্রজন্মের পর প্রজন্মের হাত ধরে এগিয়ে চলেছে বাদামতলা আষাঢ় সংঘের পুজো। শুরুতে থিমের রেওয়াজও ছিলনা। তারপর সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিগত কয়েক বছর ধরেই আঙ্গিক বদলেছে বাদামতলার পুজো। ফি বছরই মন্ডপ, প্রতিমায় নজরকাড়া ছাপ ও নিত্যনতুন ভাবনা এনে শহরবাসীকে ভাবতে বাধ্য করে চেষ্টা করে তারা। যার ফলে ক্রমেই মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে এই পুজো। প্রতি বছর দ্বিতীয়া বা তৃতীয়ায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেকটি পুজোর উদ্বোধন করেন, তার মধ্যে দক্ষিণ কলকাতার এই পুজো অন্যতম। এ বছর ৮১ তম বর্ষে তাদের থিম ‘বিন্দু’।
বিজ্ঞান বলে, ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি মহাশূন্যে একটি বড় গ্রহ বা তারকার বিস্ফোরণ থেকে সৃষ্ট বিন্দু সম ক্ষুদ্র গ্রহাণু থেকে। যা বিগ ব্যাং তত্ত্ব নামে পরিচিত। আর পুরাণ দাবি করে, সেই বিন্দুই হল মায়ের ত্রিনয়ন। যার জ্যোতিতে আলোকিত বিশ্ব। সৃষ্ট প্রাণ। মোদ্দা কথা, শুরুর দিন থেকে আজ পর্যন্ত এই বিন্দুর মধ্যেই লুকিয়ে আছে সব অস্তিত্ব। এই দুই তত্ত্বকেই এক বিন্দুতে মিলিয়ে বাদামতলার এবারের থিম। সমগ্র ভাবনা ও সৃজনে রয়েছেন শিল্পী স্নেহাশীষ মাইতি। সবকিছু কিভাবে বিন্দুতে শুরু হয়ে বিন্দুতেই বিলীন হয়ে যায়, মন্ডপে সেটাই ফুটিয়ে তুলবেন তিনি। স্ট্রাকচার আর আলো দিয়ে ইলিউশন তৈরি করেই তুলে ধরা হবে বিন্দু বা সৃষ্টির রহস্যকে।
বাদামতলার সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব চক্রবর্তী এখন খবরকে বলেন, “এ বছর ৮১ তম বর্ষে পদার্পন করলাম আমরা। আমাদের এবারের থিম ‘বিন্দু’। এই থিমের মাধ্যমে আমরা মূলত এটাই বলতে চাইছি যে, বিন্দুতে শুরু, বিন্দুতেই বিলীন। আমরা সকলেই জানি, মা দুর্গা হলেন ৩৩ কোটি দেবতার সম্মিলীত শক্তির উৎস্য। আর মায়ের ত্রিনয়ন হল সেই শক্তির আধার। যার জ্যোতিতে আলোকিত বিশ্ব। এটাকেই আমরা বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করছি। সমগ্র পরিকল্পনা শিল্পী স্নেহাশীষ মাইতির। আর প্রতিমা গড়ছেন ভাস্কর অরুণ পাল।”
সঞ্জীব বাবু জানান, “গোটা মন্ডপ জুড়েই ইন্সটলেশনের কাজ চলছে। যাতে ব্যবহার করা হচ্ছে লোহা, বাটাম, কাপড়। এর সঙ্গে সংমিশ্রণ হবে এলইডি এবং অন্যান্য আলোর। আমাদের এবারের বাজেট ২৫ লক্ষ টাকা।” ফি-বছরই দুর্গাপুজোয় নয়া দর্শন ও ভাবনা হাজির করে বাদামতলা আষাঢ় সংঘ। যে কারণে পুজোর কদিন এখানে নামে মানুষের ঢল। এবারও তাদের ভাবনা মানুষের নজর টানবে বলেই বিশ্বাস পুজো উদ্যোক্তাদের।