সমাজে কোনো ঘটনা সম্পর্কে নিজের মতামত জানানোর জন্য মানুষ সোশ্যাল মিডিয়াকেই হাতিয়ার করেন। সেখানেই তাঁরা তুলে ধরে কোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিজেদের মতামত। সমাজ সচেতন মানুষদের মতামত সবসময় এক অন্যমাত্রা দেয়। তবে বর্তমানে যাদবপুরকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে বাচিকশিল্পী ঊর্মিমালা বসুর একটি ফেসবুক পোস্ট ঘিরে আপাতত উত্তাল হয়ে উঠেছে নেট দুনিয়া। ওই পোস্টের পরিপ্রেক্ষিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে অশ্লীল ভাষায় আক্রমণ করার অভিযোগ উঠেছে। ঊর্মিমালাকে নিয়ে তৈরি হওয়া মিম ভাইরাল হয়েছে, যেখানে তাঁর উদ্দেশে ব্যবহার করা হয়েছে কুরুচিকর শব্দ। আর গোটা বিষয়টির নিন্দা করতে গিয়ে ফের বিতর্কে জড়িয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা গায়ক বাবুল সুপ্রিয়। তিনি কি করে এমন কুরুচিকর মানুষজনকে সমর্থন জানালেন তা ঘিরেই নিন্দার ঝড় উঠেছে।
ঘটনার সূত্রপাত কয়েক দিন আগে। যাদবপুর-কাণ্ডের পর ফেসবুকে একটি লেখা পোস্ট করেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী ঊর্মিমালা। যদিও তাঁর দাবি, লেখাটি তিনি নিজে লেখেননি। সোহিনী রায় নামে এক জনের ওয়াল থেকে সেটি তিনি শেয়ার করেন। পরে সেই লেখাটি কোনও ভাবে ছড়িয়ে পড়ে, ‘ঊর্মিমালা বসুর ওয়াল থেকে পাওয়া’ হিসেবে। এর পরেই ওই পোস্টের তলায় কুরুচিকর মন্তব্যের বন্যা বয়ে যায়। রুচিহীন শব্দ, কদর্য ভাষা এবং নোংরা ভঙ্গিতে আক্রমণ করা হয় বর্ষীয়ান এই বাচিকশিল্পীকে। কুৎসিত শব্দে আক্রমণ করে একটি মিম-ও ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
মঙ্গলবার ঊর্মিমালা বলেন, ‘‘আমি নিজে ওই লেখা লিখিনি। এক জনের ওয়াল থেকে শেয়ার করেছিলাম। কিন্তু, বিষয়টি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়াটা দুর্ভাগ্যজনক। তবে, যাদবপুরের ছাত্রছাত্রীরা দেশের কঠিন সময়ে যে প্রতিবাদের স্পর্ধা দেখিয়েছে, যাদবপুরের প্রাক্তনী হিসেবে আমার সেটা ভাল লেগেছে। এটা আমার ব্যক্তিগত অনুভব, যা বলার অধিকার আমার রয়েছে। বলতে কোনও দ্বিধাও নেই।’’
ঊর্মিমালাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় এ ভাবে আক্রমণের প্রতিবাদে সরব হয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। কবি জয় গোস্বামীর কথায়: ‘‘ঊর্মিমালা বসু এক জন সর্বজনমান্য শিল্পী। সেই শিল্পীকে এমন ভাষায় অপমান করা হল যা চরম অশালীনতায় ভরা।” সাহিত্যিক সঙ্গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত, বিষয়টির সর্বান্তকরণে নিন্দা করা উচিত। সাহিত্যিক তিলোত্তমা মজুমদারও এমন ঘটনার প্রতিবাদ করেন। তিনি বলেন, ‘’এই ধরনের আক্রমণকে যে কোনও সচেতন মানুষের মতো আমিও ঘৃণার সঙ্গে প্রতিবাদযোগ্য মনে করছি।’’