বিগত লোকসভা নির্বাচনের শেষদফা ভোটের ঠিক আগেই কলকাতায় বিজেপির রোড শো’কে ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠেছিল কলকাতা ইউনিভার্সিটি ও বিদ্যাসাগর কলেজ ক্যাম্পাস। গেরুয়া বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল কলেজের ভেতর থাকা বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার। বৃহস্পতিবার ফের সেই শিক্ষাঙ্গনেই সন্ত্রাস চালিয়েছে তারা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে নিয়ে গণ্ডগোলের জেরে সন্ধ্যার পর থেকেই গোটা ক্যাম্পাস জুড়ে রীতিমতো তান্ডব চালায় এবিভিপি। ভাঙচুর চলে এসএফআইয়ের ইউনিয়ন রুম থেকে শুরু করে অন্যান্য দফতরে। আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হল সাইকেল, কম্পিউটার-সহ একাধিক জিনিসে। আর এরই মধ্যে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে কার্যত সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হল।
বারংবার মুখ্যমন্ত্রী অনুরোধ করলেও তা উপেক্ষা করে রাজ্যপাল যে ভাবে ঘটনাস্থলে গিয়েছেন, গোটা ঘটনায় নিজেকে ‘জড়িয়েছেন’ এবং পরিস্থিতি আরও ঘোরালো করে তুলেছেন— তাকে মোটেই ভাল চোখে দেখছে না নবান্ন। রাজ্যপালের সাংবিধানিক মর্যাদা রক্ষা করে সরকার মুখে কিছু না বললেও তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় টুইট করে দলের মনোভাব স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তাঁর মন্তব্য, ‘রাজ্যপাল দুর্ভাগ্যজনক ভাবে রাজ্য সরকারকে না জানিয়েই যাদবপুরে গিয়েছেন এক জন বিজেপি নেতাকে ‘উদ্ধার’ করতে। তিনি রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে অনভিপ্রেত মন্তব্য করলেও সেখানে বিজেপি এবং এবিভিপির গুন্ডারা যা করেছে, সে সম্পর্কে একটি কথাও বলেননি।’
প্রসঙ্গত, রাজ্যপাল যে যাদবপুর যাচ্ছেন, সে কথা মুখ্যমন্ত্রী জানতে পারেন ধনখড় রাজভবন থেকে রওনা দেওয়ার পরে। সূত্রের খবর, গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা ২০ মিনিটে দিল্লীতে মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করেন তিনি। মমতা তখন একটি বৈঠকে ব্যস্ত থাকায় সেই ফোন ধরতে পারেননি। দশ মিনিট পরে মুখ্যমন্ত্রী ফোন করেন রাজ্যপালকে। ধনখড় যাদবপুরে যাচ্ছেন জেনে মমতা তাঁকে বলেন, সেখানকার পরিস্থিতি এখন অগ্নিগর্ভ। রাজ্যপাল সেখানে গেলে তা আরও জটিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপালকে আরও বলেন, বাবুল সুপ্রিয় কোনও সরকারি অনুষ্ঠানে যাদবপুরে যাননি। গিয়েছেন একটি রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে। সেখানে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেটাও রাজনৈতিক। এর মধ্যে রাজ্যপালের উপস্থিতি অভিপ্রেত নয় বলেই তিনি মনে করেন। রাজ্যপাল অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধ উপেক্ষা করে জানিয়ে দেন, তিনি যাদবপুরে যাচ্ছেন।
এরপরই কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা, পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অন্য প্রশাসনিক পদাধিকারীদের সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। এবং ৬টা ৩৮ মিনিটে ফের রাজ্যপালকে ফোন করে আরও এক বার রাজ্যপালকে যাদবপুরে না যাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছুটা সময় চান মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে তিনি ধনখড়কে জানান যে, যাদবপুরের ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই। সেখানকার ইউনিয়ন বামপন্থীরা নিয়ন্ত্রণ করে। সরকার তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। বাবুল সুপ্রিয়কে নিরাপদে বার করে আনার দায়িত্ব যে সরকারের, তা-ও জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। এবারেও মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধ উড়িয়ে রাজ্যপাল জানিয়ে দেন, তিনি যাদবপুরে প্রায় পৌঁছে গিয়েছেন।
সন্ধ্যা ৬টা ৪০-এ আবার রাজ্যপালকে ফোন করেন মমতা। তাঁকে জানান, পুলিশ বাবুল সুপ্রিয়কে বাইরে নিয়ে এলেও তিনি অন্য গেট দিয়ে ফের ক্যাম্পাসে ঢুকেছেন। এই ‘রাজনৈতিক’ টানাপড়েনের মধ্যে না জড়াতে ফের রাজ্যপালকে অনুরোধ জানান মুখ্যমন্ত্রী। সূত্রের খবর, এই সময় ধনখড় মুখ্যমন্ত্রীকে বলেন, রাজ্যপাল হিসেবে তিনি পুলিশকে নির্দেশ দিচ্ছেন, তারা ক্যাম্পাসে ঢুকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনুক। মমতা তাঁকে বলেন, উপাচার্য নির্দেশ না দিলে পুলিশের পক্ষে ক্যাম্পাসে ঢোকা সম্ভব নয়। উপাচার্য স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন যে, ছাত্র-ছাত্রীদের ওপরে কোনও রকম বলপ্রয়োগ তিনি করবেন না। রাজ্যপাল তখন ‘অতিসক্রিয়তা’ দেখিয়ে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসেবে তিনি উপাচার্যকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রী পাল্টা বলেন, এ ভাবে কোনও উপাচার্যকে অপসারণ করা যায় না। সুরঞ্জন দাস অত্যন্ত নামী শিক্ষাবিদ। তা ছাড়া, এই মুহূর্তে তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে।
এরপরই রাজ্যপাল ফোন কেটে দেন। এবং তিনি যাদবপুরে পৌঁছনোর আগেই রাজভবনের পক্ষ থেকে এক প্রেস বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের ঘেরাও হওয়ার ঘটনা নিয়ে রাজ্যপাল মুখ্যসচিব এবং উপাচার্যের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। উপাচার্যকে তিনি বলেছেন যে, এই ঘটনায় অবিলম্বে ব্যবস্থা না নিয়ে তিনি ঠিক কাজ করেননি। রাজ্যপাল মনে করেন…