আশ্বিনের আকাশে সাদা মেঘের ভেলা, সোনা ঝরা রোদ আর কাশফুলের দলুনি- চারিপাশেই পুজো-পুজো আমেজ। শহরের ছোট-বড় সব পুজো মন্ডপেই চলছে জোরদার তোরজোড়, উমা বরণের প্রস্তুতি। শিল্পীরা ব্যস্ত তাঁদের মন্ডপ-প্রতিমায় ফাইনাল টাচ দিতে। একই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে, বিগত কয়েক বছরে দক্ষিণের থিম পুজোকে টেক্কা দিয়ে শহরের অন্যতম বড় পুজো রূপে আত্মপ্রকাশ করা টালা পার্ক প্রত্যয়েও। গত দু’বছর পর পর এশিয়ান পেইন্টস শারদ সম্মান উঠেছে যাদের হাতে। বরাবরের মতো এ বছরও টালা পার্ক প্রত্যয়-এর পুজোয় থাকছে নতুন চমক। থিম মেকার সুশান্ত পালের ভাবনায় ৯৪তম বর্ষে তাদের নিবেদন ‘কল্পলোক’। এই ভাবনা থেকেই এবার সেজে উঠছে টালা পার্ক প্রত্যয়ের মণ্ডপ। সমাজ জীবনের বিভিন্ন কাল্পনিক ঘটনা, গল্পই এবার পুজোয় তুলে ধরছেন শিল্পী।
টালা পার্ক প্রত্যয়ের সহ সম্পাদক সুদীপ্ত মুখার্জী বলেন, ‘এ বছর ৯৪ তম বর্ষে পদার্পণ করেছে আমাদের পুজো। এ বছরের থিম কল্পলোক। যার রূপদান করছেন শিল্পী সুশান্ত পাল। এটি শিল্পীর একান্তই নিজস্ব ভাবনা। তবে তাঁর ভাবনা রূপায়নে আমরা তাঁকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছি। কল্পলোক বলতে শিল্পী যা বোঝাতে চেয়েছেন তা তাঁর ভাষাতেই বলি, ক্ষেত্র যেখানে অনন্ত সেখানে বসত করে কল্পনা। সেই মুক্ত প্রান্তরে নিয়ন্ত্রণ হার মানে। মুহূর্তের মুগ্ধতাও সৃষ্টি করে কোনও অজানা সম্ভাবনা। রোজনামচার চেনা চরিত্রগুলো তখন অচেনা মোড়কে রূপান্তরিত হয়। জাগে বিস্ময় জাগে ঈশ্বর। সূচনা হয় আকার থেকে নিরাকারে ঈশ্বরের অতি অনায়াস যাতায়াত। এই শারদীয়ায় টালা পার্ক প্রত্যয় এমনই এক অনুভূতির অন্তরঙ্গ কল্পকথা পরিবেশন করছে।’
সুদীপ্ত বাবু জানান, মণ্ডপের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই গড়ে উঠছে মাতৃপ্রতিমা। এ বছর তাদের প্রতিমা শিল্পী সুব্রত কর্মকার এবং শিল্পী সুশান্ত পাল নিজেই। আলো করছেন সুমন মাইতি। আর আবহ সঙ্গীত তৈরি করেছেন সৌরেন্দ্র-সৌমজিৎ জুটি। আলো-আঁধারির মায়াবী খেলাতেই জীবন্ত হয়ে উঠবে মণ্ডপ। আলোর রকমারি ব্যবহার আর আবহে মুগ্ধ হয়ে কল্পলোক-এর অন্দরে পৌঁছে যাবেন দর্শনার্থীরা। মূল মন্ডপটি তৈরি হচ্ছে দরমা, লোহা, লাইট এবং মেকানিক্যাল কিছু ইন্সটলেশনের মাধ্যমে। প্রায় চারমাস ধরে চলছে কাজ। মন্ডপের উদ্বোধন হবে মহালয়ার দিন চক্ষুদানের মাধ্যমে। বিগত কয়েকবছর ধরেই পুজোর কদিন বিপুল জন সমাগম হয় টালা পার্ক প্রত্যয়ের পুজো দেখতে। এ বছরও কল্পলোক চাক্ষুষ করতে এ পুজোয় উপচে পড়বে দর্শনার্থীদের ভিড়, থিমের চমকই তা বলে দিচ্ছে।