মোদীর সরকারের দ্বিতীয় ইনিংসের একেবারে শুরুতেই কেন্দ্রীয় নীতির জেরে দেশের অর্থনীতিতে গভীর মন্দা ও নীতি-পঙ্গুত্ব দেখা দিয়েছে। শিল্পে খরা। নগদ টাকার জোগান নেই। জিডিপি মুখ থুবড়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারের রাজস্ব আদায় কমবে, এটাই স্বাভাবিক। হয়েছেও তাই। চলতি আর্থিক বছরের প্রথম পাঁচ মাসে কেন্দ্রীয় সরকারের যে আয়কর আদায় হয়েছে, তা একেবারেই জুতসই নয়। সেন্ট্রাল বোর্ড অব ডিরেক্ট ট্যাক্সেস এর সূত্র থেকে পাওয়া হিসেব বলছে, ওই তিন মাসে আয়কর আদায় বৃদ্ধির হার মাত্র ৯ শতাংশ। তবে এই পরিস্থিতি সত্ত্বেও এ রাজ্যের অবস্থা যে একেবারে উল্টো, তা জানান দিচ্ছে দফতরের তথ্যই।
তারা বলছে, এখনও পর্যন্ত এ রাজ্যের আয়কর বৃদ্ধির হার ১৯ শতাংশেরও বেশি। সাফল্যের এখানেই শেষ নয়। যে রাজ্যগুলিতে বেশি অঙ্কের আয়কর আদায় হয়, সেগুলির তুলনায় দেশের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে বাংলা। চলতি আর্থিক বছরে আগস্ট পর্যন্ত কত টাকা আদায় হল রাজ্যে? এখানে কলকাতা জোন থেকে যে আয়কর আদায় হয়, তার মধ্যে পড়ে বাংলার পাশাপাশি সিকিম এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ।
সূত্রের হিসেব বলছে, এখানে মোট আয়কর আদায় হয়েছে প্রায় ১১ হাজার ৬০২ কোটি টাকা। গত বছর ওই সময়ের নিরিখে আদায় হয়েছিল প্রায় ৯ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা। বৃদ্ধির হার ১৯.১ শতাংশ। এই যেখানে রাজ্যের পরিস্থিতি, সেখানে আগস্ট পর্যন্ত দেশে আয়কর বাবদ মোট আদায় হয়েছে প্রায় ২ লক্ষ ৭১ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা। গত বছর আগস্ট পর্যন্ত সেই অঙ্ক ছিল ২ লক্ষ ৪৮ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা। বৃদ্ধির হার ন’শতাংশ। গোটা দেশে যেখানে আর্থিক মন্দা চলছে, সেখানে রাজ্যের সাফল্যে স্বাভাবিকভাবেই খুশি প্রশাসনের কর্তারা।
এই সঙ্কটের সময়েও কী করে আয়কর আদায় বাড়াল রাজ্য? দফতরের কর্তারা বলছেন, মূলত এর দু’টি কারণ। প্রথমত, চলতি বছরে সাধারণ মানুষের থেকে আয়কর বাবদ অগ্রিম আদায় হয়েছে ভালো পরিমাণে। মোট আদায়ের পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার ১০৩ কোটি টাকা। সেই টাকা অনেকটা এগিয়ে দিয়েছে রাজ্যকে। দ্বিতীয় কারণটি হল, বড় শিল্প সংস্থাগুলি এ রাজ্যে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ভোগ্যপণ্য, ব্যাঙ্ক, খাদ্যদ্রব্য, বিদ্যুৎ, জুতো, কয়লা, রং প্রভৃতি ক্ষেত্রে সংস্থাগুলি চলতি আর্থিক বছরে ভালো আয় করেছে। তাতে অগ্রিম আয়কর জমা বেড়েছে।