বিপুল জনমত নিয়ে দ্বিতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় ফিরেই দেশ জুড়ে গৈরিকিকরণে উঠেপড়ে লেগেছে মোদী সরকার। প্রথমে শিক্ষায়। তার পর সর্বস্তরে। দেশের সর্বত্রই এখন হিন্দী ভাষা ব্যবহারের প্রশ্নে চাপ বাড়াচ্ছে শাসক শিবির। যা দেখে বিরোধীদের অভিযোগ, বিজেপির এই হিন্দী-সক্রিয়তার মধ্যে পরিকল্পিত ছক আছে। অনেকের মতে, হিন্দী-হিন্দু-হিন্দুস্তান— সঙ্ঘ পরিবারের এই ঘোষিত নীতিকে বাস্তবায়িত করতে এখন জল মাপছেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা।
এরই মধ্যে এবার সংস্কৃতি মন্ত্রকের ‘হিন্দী রাষ্ট্রভাষা’ বলে করা একটি ফেসবুক পোস্ট গোটা বিতর্ককে উস্কে দিয়েছে। সংস্কৃতি মন্ত্রকের ওই ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, ‘বিশ্বের ৭৭০ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ভারতীয়দের আলাদা পরিচিতি দিয়েছে রাষ্ট্রভাষা হিন্দী।’ তবে পোস্টের বিষয়টি তাদের অজানা বলে দাবি করে মন্ত্রক পরে রাতের দিকে সেটি মুছে দেয়। মন্ত্রকের এক কর্তা জানান, ওই পোস্টের বিষয়ে তাঁর ধারণাই নেই! তবে তিনি বলেন, ‘পোস্টে হিন্দীকে রাষ্ট্রভাষা লেখা হলে, তা ঠিক নয়।’
হিন্দী নিয়ে বিজেপির এমন প্রচারের সঙ্গে অনেকেই মিল পাচ্ছেন অনুচ্ছেদ ৩৭০ রদের। কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, ‘অনেকেই ভেবেছিলেন ৩৭০ প্রত্যাহার বিজেপির আদর্শগত বিশ্বাস। বাস্তবে হবে না। কিন্তু হল তো!’ বিরোধীদের আশঙ্কা, হিন্দী চাপানোর, পরিকল্পনার অন্যতম অঙ্গ হল, জাতীয় শিক্ষা নীতিতে হিন্দী শেখাকে বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব। মূলত দক্ষিণের রাজ্যগুলির চাপে বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্র পিছিয়েছে।
তবে সঙ্ঘ পরিবারের একটি অংশ দীর্ঘ দিন ধরেই ইংরেজি শিক্ষার বিরুদ্ধে। অনেকের আশঙ্কা, প্রথমে ইংরেজি ও পরে আঞ্চলিক ভাষাশিক্ষাকে ঐচ্ছিক করে আবশ্যিক ভাষা হিসেবে শুধু হিন্দিকেই প্রাধান্য দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বিজেপির। কংগ্রেসের আরেক নেতার মতে, ‘এমনও হতে পারে শাসক শিবির দেখে নিতে চাইছে, কোথায় বিতর্কের ঢেউ উঠছে। তার পর কাশ্মীর মডেল প্রয়োগ করবে।’ তৃণমূলের প্রধান জাতীয় মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়ানের মতে, ‘অর্থনীতি গাড্ডায়। চাকরির সঙ্কট। তাই এ হল বিজেপির নজর ঘোরানোর চেষ্টা।’