শহরে আয়োজিত সংক্রমণ বিষয়ক এক চিকিৎসক সম্মেলনে বিশেষজ্ঞ ও সমাজের বিভিন্ন মহলের বিশিষ্টদের মুখে শোনা গেল অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে বেশ কিছু আশঙ্কার কথা। জানা যাচ্ছে, অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে গড় আয়ু এক ধাক্কায় অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছিল। তার পর পেরিয়েছে প্রায় ন’টি দশক। সংক্রমণকে বাগে আনা গিয়েছে অনেকটাই।
কিন্তু মহার্ঘ এই ওষুধের অপব্যবহার আজ ফের ঝুঁকির মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে মানুষকেই। পরিচিত ব্যাকটেরিয়াকে নিকেশ করতে গিয়েও হিমশিম খাচ্ছে শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক এবং পরিস্থিতি এখন এমনই হয়ে উঠেছে যে, তার জেরে সংক্রমণ তো সারছেই না, বরং বহু ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হলে নতুন করে সংক্রমণের কবলে পড়ছেন সেই রোগী। এমনকি অনেক সময়ে তা সে রোগীর প্রাণসংশয়ের কারণও হয়ে উঠছে।
ইএম বাইপাস লাগোয়া একটি পাঁচতারা হোটেলে শুক্র-শনি-রবিবার, তিন দিন ধরে চলছে ‘হসপিটাল ইনফেকশন সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া কনফারেন্স’ শীর্ষক সর্বভারতীয় সম্মেলন। দেশ-বিদেশের প্রায় পাঁচশো চিকিৎসক তাতে অংশ নিয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের কথায় উঠে এসেছে, হাসপাতালে ভর্তি হলে সেরে ওঠার বদলে অন্তত দুই শতাংশ রোগী হাসপাতাল থেকেই নতুন করে সংক্রমিত হন। কোনও কোনও ক্ষেত্রে সংক্রমিত রোগীর এই হার প্রায় ১০% ছুঁয়ে ফেলছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, কারণে-অকারণে চিকিৎসকদের একাংশ অপ্রয়োজনে এত বেশি অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করেন যে, সত্যিকারের প্রয়োজনে সেই অ্যান্টিবায়োটিক আর রোগীর কোনো কাজে লাগে না। এর পিছনে দায়ী করা হচ্ছে, ডাক্তার না-দেখিয়ে ওষুধের দোকান থেকে মুড়ি-মুড়কির মতো অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খাওয়ার প্রবণতাও।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর এই নিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় একটি আলোচনাসভার আয়োজনও করা হয়। সেখানে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার ও অপব্যবহার নিয়ে সাধারণ মানুষের সচেতনতার অভাবের প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়। রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য, বিশেষ সচিব (স্বাস্থ্য-শিক্ষা) তমালকান্তি ঘোষ, হৃদ-শল্য বিশেষজ্ঞ কুণাল সরকার, কর্পোরেট হাসপাতাল কর্তা তথা চিকিৎসক রূপালি বসু, ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ অরিন্দম কর, চলচ্চিত্র পরিচালক অরিন্দম শীল প্রমুখ অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ নিয়ে চিকিৎসকদের আরও যত্নশীল হওয়া ও সাধারণ মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির পক্ষে সওয়াল করেন।