ছ’বছর আগের অক্টোবরে লাহলির চৌধুরি বনসিলাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিদায়ী রঞ্জি ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন সচিন তেন্ডুলকার। ক্রিকেট অনুরাগী বাবার হাত ধরে চারদিনই মাঠে এসেছিলেন চতুর্থ শ্রেণীর এক ছাত্রী। ছ’বছর পর ভারতের মহিলা ক্রিকেটে ‘সচিন–সম’ মিতালি রাজের পরিবর্তে ভারতীয় দলে সুযোগ পেলেন সেই ছাত্রীই। টি-২০ ক্রিকেট থেকে মিতালির অবসরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টি-২০ সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচে সেই শেফালি বর্মাকে দলে নিয়েছেন জাতীয় নির্বাচকরা। ১৬ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক মঞ্চে অভিষেক হয়েছিল সচিনের। তাঁর ভক্ত শেফালি বিশ্ব ক্রিকেটে অভিষেকের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে মাত্র ১৫ বছর বয়সে। বাবা সঞ্জীবের অপূর্ণ স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে দৌড়ে চলেছেন রোহতকের এই কন্যা।
ছোটবেলায় ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন ছিল। কিন্তু বাড়ির চাপে শেষপর্যন্ত পারিবারিক স্বর্ণব্যবসায় নাম লেখাতে হয় সঞ্জীবকে। বড় মেয়ে শেফালির ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ দেখে নিজের অপূর্ণ স্বপ্ন তাঁর মাধ্যমে বাস্তবায়িত করতে নেমে পড়েন তিনি। বেঙ্গালুরু থেকে ফোনে শেফালি বলছিলেন, ‘বাবা একসময় ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। প্রথম দিন থেকে তিনিই আমার ক্রিকেট গুরু। যখন আমি খেলা শুরু করি, অনেকেই বাবাকে নানা কথা বলতেন। বাবা সেসবে কান দিতেন না। সত্যি বলতে কি, দেশের হয়ে খেলার স্বপ্ন যতটা আমার, ততটাই আমার বাবারও।’
আপাতত ভারতীয় দলের সঙ্গে বেঙ্গালুরুর শিবিরে আছেন শেফালি। টিম ইন্ডিয়ার ড্রেসিংরুমে পা রাখার দিনেও ছ’বছর আগের লাহলির স্মৃতি টাটকা তাঁর মনে। বলছিলেন, ‘প্রথম দিন শচীন স্যরকে দেখার মুহূর্তটা কোনওদিন ভুলতে পারব না। ওঁকে দেখেই আমার ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু।’ প্রিয় ক্রিকেটারের নাম শচীন হলেও তিনি অবশ্য দেখেটেখে নয়, মারকাটারি ক্রিকেটেই সাবলীল। কেন? মুখচোরা শেফালির হাসতে হাসতে জবাব, ‘আসলে বোলারদের শাসন করতে দারুণ লাগে।’
ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার এই আনন্দের মধ্যেও অবশ্য অদ্ভুত সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন শেফালি। মারকুটে ওপেনার কিছুটা চাপেই আছেন। আগামী বছর দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষা তাঁর। নিজেই প্রসঙ্গ টেনে এনে বললেন, ‘এতদিন স্কুল আমাকে দারুণ সহযোগিতা করেছে। কিন্তু বোর্ড পরীক্ষায় তো স্কুলের কিছু করণীয় থাকবে না!’ তাহলে উপায়? শেফালির জবাব, ‘দেখা যাক। ক্রিকেটের সঙ্গে পড়াশোনাতেও যতদূর সম্ভব এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব।’