দক্ষিণ কলকাতার অন্যতম সেরা পুজো ত্রিধারা সম্মিলনী। ত্রিধারা মানেই পুজোর দিনগুলোয় উপচে পড়া ভিড়। ত্রিধারা মানেই নতুন নতুন ভাবনা, থিমের চমক। তাদের ৭৩ তম বর্ষে তৃণমূল কাউন্সিলর দেবাশিষ কুমারের পুজো বলে পরিচিত এই পুজোর থিম দৃষ্টিকোণ। প্রতিটি মানুষেরই নিজস্ব ভাবনাচিন্তার মতো নিজস্ব দৃষ্টিকোণও থাকে। একজন যেভাবে একটি বিষয়কে দেখে, ভিন্ন একটি মানুষ সেটিকে সেভাবে দেখে না। তবে সকলেই যদি মানব ধর্মের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে, তাহলে কিন্তু সকলেরই এই এক উপলব্ধি হবে যে সবাই মানুষ। এই বিষয়টিকেই তাঁর ভাবনা ও সৃজনে তুলে ধরছেন শিল্পী গৌরাঙ্গ কুইল্যা।
ত্রিধারার সাধারণ সম্পাদক মুকুল মান্না জানান, আমাদের পুজো এবার ৭৩ তম বর্ষে পদার্পণ করছে। আমাদের এবারের থিম দৃষ্টিকোণ। শিল্পী গৌরাঙ্গ কুইল্যা দৃষ্টিকোণ বলতে বোঝাতে চাইছেন যে, মানুষের দৃষ্টির ওপরেই সবটা নির্ভর করে। অর্থাৎ একটা জিনিস আমি এক রকম দেখি, আরেকজন আবার আরেকরকম ভাবে দেখে। তবে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমরা সবাই মানুষ। মানব ধর্মই সবথেকে বড় ধর্ম সেই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে সবাই মানুষ, সে যতই বিভেদ থাকুক না কেন। সেটাই আমাদের শিল্পী এখানে ফোটাতে চাইছে। আপনারা যখন এখানে আসবেন তখন শুরুতে অনেক নারী মুখ দেখবেন। তারপর যতই প্যান্ডেল এর মধ্যে ঢুকবেন তখন দেখবেন নারী মুখ গুলো আস্তে আস্তে শক্তি অর্থাৎ মা দুর্গায় পরিণত হয়ে যাচ্ছে। মা দুর্গাই তো শক্তি। মানে আমরা নারীশক্তিরই পুজো করছি। আমরা নারীশক্তিরই পূজারী।
বিগত কয়েক বছর ধরেই শহর জুড়ে বিভিন্ন ‘হেভিওয়েট’ পুজোগুলির মধ্যে এক অঘোষিত লড়াই দেখা যায়। কোন পুজোকমিটির ঝুলি কতখানি ভরল, তা-ও উঠে আসে আলোচনায়। এ নিয়ে মুকুলবাবু বলেন, দেখুন শারদ সম্মান বলতে কলকাতার যত ছোট-বড় সম্মান আছে, সবই আমাদের ঝুলিতে আছে। এশিয়ান পেইন্টস শারদ সম্মান তো আছেই। এছাড়াও আমরা বেশ কয়েকবার মডেল পুজো হিসেবে নিজেদের স্থান করে নিতে পেরেছিলাম। তবে এই বড় বড় কোম্পানীগুলি যে কম্পিটিশন করে, সেগুলোয় জেতার জন্যে কিন্তু আমরা পুজোটা করি না। আমাদের সাফল্য কোথায় জানেন? যখন মানুষ আমাদের পুজো দেখেন আর ভাল বলেন, সেটাই আমাদের প্রাপ্তি। আর তার সঙ্গে যদি কোনও পুরষ্কার মিলে যায়, সেটা নিশ্চয়ই ভাল লাগে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার পুজো কমিটিগুলির ওপর যে আয়কর চাপিয়ে দিয়েছে, তার প্রভাব পড়েছে এ পুজোর ওপরও। এ প্রসঙ্গে মুকুল বাবু বলেন, দেখুন গত বছর থেকে হঠাতই আয়কর চাপিয়ে দিয়েছে কেন্দ্র। আমাদের কাছেও চিঠি এসেছিল। আমার মনে হয় না কোনও পুজোর ওপরে আয়কর লাগু হওয়া উচিত। কারণ এটা তো কোনও লাভজনক সংস্থা নয়। আমরা দুর্গাপুজোর আয়োজন করি। তাতে লাভের ব্যাপার নেই। আমাদের একটা ফ্রী মেডিক্যাল ইউনিট আছে। যেখানে সারাবছর বিনামূল্যে চিকিৎসা এবং ওষুধপত্র দেওয়া হয়। আই ক্যাম্প হয় বছরে একটা করে। পাশাপাশি আমরা দুঃস্থদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ করি। ত্রিধারা কম্পিউটার ট্রেনিং অ্যাকাডেমিতে কম্পিউটার শেখাই। স্পোকেন ইংলিশের ক্লাসও আছে। শুধু তাই নয়। আমরা ৬ টাকার বিনিময়ে ভাত ডাল সবজি খাওয়াই এবং সেটা ৩৬৫ দিনই চলে। কিন্তু তা সত্ত্বেও কেন্দ্র আমাদের ওপরে আয়কর চাপিয়ে দিয়েছে।
–নিজস্ব চিত্র