ভারতীয় মহাকাশ বিজ্ঞানীরা যখন নিজেদের সর্বোচ্চ পরিশ্রম ও একাগ্র নিষ্ঠা দিয়ে দিন-রাত এক করে চন্দ্রযান-২ প্রকল্পের সাফল্য সুনিশ্চিত করতে ব্যস্ত, ঠিক তখনই নজিরবিহীনভাবে বেতন কমিয়ে দিয়ে তাঁদের হতাশা বাড়ানোর চেষ্টা করেছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার! ভারতীয় মহাকাশ বিজ্ঞানীদের তৈরি চন্দ্রযান-২ যখন সাফল্যের সঙ্গে চাঁদের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিল, তার ঠিক একমাস আগে অর্থাৎ গত ১২জুন এক আদেশনামা জারি করে ইসরোর বিজ্ঞানীদের বেতন এক ধাক্কায় অন্তত ১০ হাজার টাকা করে কমিয়ে দিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার। সরকারি আদেশনামা অনুযায়ী ১জুলাই থেকে এই কম বেতনই নিতে বাধ্য হচ্ছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা।
মোদী সরকারের এই আচরণে ইতিমধ্যেই ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে ইসরোর চেয়ারম্যান কে শিবনকে একটি চিঠি দিয়েছেন সংস্থার বিজ্ঞানীদের সংগঠন স্পেস ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (এসইএ)। বেতন কমানোর আদেশ অবিলম্বে প্রত্যাহারের জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করা হয়েছে সেই চিঠিতে। ভারতীয় চন্দ্রযানের একশো শতাংশ সাফল্য দাবি করা না গেলেও, ভারতীয় বিজ্ঞানীদের কর্মকুশলতা এবং আন্তরিকতার প্রশংসায় এখন সারা দেশের সঙ্গে মুখর হয়ে রয়েছে গোটা বিশ্বও। এমনকি নাসার মতো সংস্থাও ইসরোর সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন।
শেষমুহূর্তে চন্দ্রযান-২ পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ না করায় এক আবেগঘন পরিস্থিতিতে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো)-র চেয়ারম্যান শিবনের পিঠ চাপড়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সান্ত্বনা দেওয়ার দৃশ্যও সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে দেশজুড়ে ভাইরাল হয়েছে। কিন্তু ভাইরাল হয়নি অন্য একটি খবর। এসবের মধ্যেই নিঃশব্দে ইসরোর বিজ্ঞানীদের বেতন কমানোর সরকারি সিদ্ধান্তটি জানাজানি হওয়ায় সর্বত্র চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। জানা গিয়েছে, মোদী সরকারের ফতোয়ায় ইসরোর ৯০ শতাংশেরও বেশি কর্মী জুলাই মাস থেকে অন্তত ১০ হাজার টাকা করে কম পাচ্ছেন!
প্রসঙ্গত, মহাকাশ গবেষণায় যুক্ত বিজ্ঞানীদের উৎসাহ দিতে এবং নতুন নতুন মেধাকে আকর্ষণ করার লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালে ইসরোয় উচ্চহারে বেতন বৃদ্ধি করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের রায়েও বলা হয়েছিল, এই বর্ধিত আয় ইসরোর কর্মীদের বেতন হিসাবেই যুক্ত করতে হবে, বিশেষ ভাতা হিসাবে নয়। সেইমতো ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতিও ইসরোয় দু’বার বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাবে অনুমোদন দেন। ২০১৯ সালের ২২ জুলাই সাফল্যের সঙ্গে উৎক্ষিপ্ত হয় চন্দ্রযান-২। তার আগে গত ১২ জুন এক আদেশনামা প্রকাশ করে কেন্দ্র জানায়, ১৯৯৬ সাল থেকে ইসরোর বিজ্ঞানীরা দু’বার বেতন বৃদ্ধির যে সুবিধা ভোগ করছেন, তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে। ১ জুলাই থেকেই এই আদেশ কার্যকর হয়ে যাবে বলে আদেশনামায় জানানো হয়।
এর পরে কংগ্রেস সাংসদ মতিলাল ভোরা গত ৩০জুলাই রাজ্যসভার অধিবেশনে বিষয়টি উত্থাপন করে সরকারি আদেশনামা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিলেন। মোদী সরকারের এই পদক্ষেপে ইসরোয় তীব্র অসন্তোষ তৈরি হলেও দেশের সম্মান জড়িত এমন একটি প্রকল্পের সাফল্যের স্বার্থে কেউ বিশেষ হইচই করেননি। তবে ইসরোর বিজ্ঞানীদের সংগঠন স্পেস ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (এসইএ) সংস্থার চেয়ারম্যান শিবনকে চিঠি দিয়ে বলেছে, ‘‘সরকার যাতে বিজ্ঞানীদের বেতন কেড়ে না নেয়, তার জন্য আপনি চাপসৃষ্টি করুন।’’ সরকারের এই আদেশনামার খবর ছড়িয়ে পড়তে শুধু বিজ্ঞানীরাই নন, বিস্ময় তৈরি হয়েছে দেশজুড়েই।