চন্দ্রযান-২-এর পেছনে অন্যতম প্রধান কারিগর হলেন ইসরোর চেয়ারম্যান কে সিবন। তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারী জেলার নাগেরকয়েল গ্রামের এক দরিদ্র প্রান্তিক চাষির ছেলে কৈলাসাবাদিভু সিবন বা কে সিবন। ছোট থেকেই জীবনটা সহজ ছিল না। কলেজে ওঠার আগে পর্যন্ত চপ্পল কেনার টাকা না থাকায় খালি পায়ে ঘুরতেন। সেই ব্যক্তি আজ দেশের অন্যতম এক সাফল্যের গল্পের কারিগর।
সিবন জানালেন, ‘ম্যাড্রাস ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজিতে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম চপ্পল পরি। এমনকি সম্পূর্ণ কলেজজীবনেও প্যান্ট কেনার টাকা না থাকায় ধুতি পরেই কাটিয়েছি।’ ছোটবেলায় চাষের কাজে বাবাকে সাহায্য করতেন সিবন। আমের মরশুমে তাঁর বাবা যে আমবাগানে কাজ করতেন সেখানেও বাবার সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন। কলেজে ভর্তি হওয়ার পরও বাড়িতে ফিরেই বাবার সঙ্গে মাঠে যেতেন। ‘সেজন্যই বাবার পছন্দ ছিল সেই কলেজ যা আমাদের বাড়ির কাছাকাছি হবে, যাতে ছুটির পর বাবাকে কৃষিকাজে সহায়তা করতে পারি।’ বললেন সিবন। অভাব থাকলেও তাঁদের বাবা–মা, তাঁদের ভাইবোনদের দিনে তিন বেলা খাবার জুগিয়েছেন বলে বাবা–মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করতে ভুললেন না আজকের রকেট বিজ্ঞানী সিবন। টাকার অভাবে ইঞ্জিনিয়ারিং–এর বদলে প্রথমে বিএসসি এবং তারপর অঙ্কেও বিএসসি করেন সিবন। চন্দ্রযান–২–এর মুখ্য বিজ্ঞানী বললেন, ‘প্রথমে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য বাবার মত বদলাতে আমি সাতদিন উপোস করেছিলাম। কিন্তু আমার মতই বদলাতে হয়েছিল। অঙ্কে স্নাতক হওয়ার পর বাবা জমি বিক্রি করে আমায় বিটেক পড়িয়েছিলেন। পড়া শেষে পর চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে হয়েছিল কারণ তখন এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং–এ তেমন চাকরি ছিল না। শুধু হ্যাল এবং ন্যালেই চাকরি ছিল। আমি সেখানে চাকরি আইনি। তাই আমি আইআইএসসি–তে পড়তে চলে যাই।’ পেশাগত জীবন নিয়ে সিবনের আক্ষেপ, ‘আমি উপগ্রহ কেন্দ্রে যোগ দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিক্রম সারাভাই সেন্টারে যোগ দিতে হয়। এখানেও এরোডায়নামিক্স গোষ্ঠীতে যোগ দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আসতে হল পিএসএলভি প্রকল্পে।’
স্কুলজীবনে পড়াশোনার সঙ্গেই চাষাবাদ করেছেন। কলেজজীবনে উঠে প্রথমবার চপ্পল পরেন। নিজের পছন্দের চাকরি কখনও পাননি। কিন্তু যেটা পেয়েছেন সেটাই মনোযোগ সহকারে করে আজ চাঁদের বুকে ভারতের নাম লিখে দিলেন কন্যাকুমারীর এক অখ্যাত গ্রাম নাগেরকয়েলের ভূমিপুত্র কৈলাসাবাদিভু সিবন। এই মানুষের সাফল্যকে কুর্নিশ জানাচ্ছে গোটা দেশ।