চার প্রজন্ম ধরে সেনাবাহিনীতে থাকার পরেও এনআরসি-ছুট হিসেবে জুটেছে দেশহীনের তকমা। যদিও আসামের মন্ত্রী ভরসা দিচ্ছেন, যত ক্ষণ নরেন্দ্র মোদী আছেন, অমিত শাহ আছেন, তত ক্ষণ হিন্দুদের দেশহীন হওয়ার আশঙ্কা নেই। কিন্তু দেশের সেবা করেও ‘দেশহীন’ হয়ে পড়া বাঙালি, নেপালি পরিবারগুলি কারও নামেই আস্থা রাখতে পারছে না।
স্বজনের বলিদানের বিনিমিয়ে পাওয়া জাতীয় শহীদের স্মারক নিয়েই বা কী করবেন বুঝছেন না অনেকে। তাই তারা সামরিক পদক ফিরিয়ে দিতে চাইছেন। তেজপুরের অবিনাশচন্দ্র দেব ১৯৭০ সালের মে মাসে বায়ুসেনার যোগ দেন। সংগ্রাম পদক-সহ তিনটি পদক পেয়েছেন তিনি। তাঁর বায়ুসেনায় যোগ দেওয়ার নথিই যথেষ্ট ভেবে নিয়ে ছেলে অজয় দেব লেগ্যাসি জমা দেন। কিন্তু প্রথম তালিকায় নাম আসেনি মরাভারলির বাসিন্দা দেব পরিবারের।
ছোট মেয়ে অঞ্জনাদেবীর স্বামী বিপ্লব দাস বলেন, পরিচিতির সূত্র ধরে এনআরসির এক কর্মীর কাছে জানতে পারি, আমার স্ত্রীর বার্থ সার্টিফিকেটে সিলমোহর স্পষ্ট নয় বলে নাম বাদ পড়েছে। ফের সব নথি, পেনশনের কাগজ দেওয়ার পরেও অবিনাশবাবুর তিন ছেলেমেয়ে এবং অজয় ও অনিতার ছেলেমেয়েদের নাম তালিকায় ওঠেনি। অবিনাশবাবুর বাড়িতে ঝুলতে থাকা গর্বের তিনটি পদক এখন ছেলেমেয়েদের কাছে অর্থহীন মনে হচ্ছে।
রাজ্যের পূর্ত স্বাস্থ্য ও অর্থমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা বলেন, তালিকায় বিস্তর ভুলের তথ্য সুপ্রিম কোর্টে তুলে ধরে এনআরসি পূনর্মূল্যায়নের দাবি ফের তুলবে রাজ্য সরকার। এ নিয়ে তিনি আসু, আসাম পাবলিক ওয়ার্কস ও অন্য সব সংগঠনকে হাত মেলানোর ডাক দেন। বলেন, “সকলে মিলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলে, আমার বিশ্বাস, আদালত এই এনআরসির উপরে স্থগিতাদেশ দেবে”।
একই ভাবে যোরহাটের চিত্তরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন দেশ স্বাধীন হওয়ার পরের বছর। তাঁর পরিবারেরও নাম নেই এনআরসিতে। ছয়গাঁওয়ের ঢেকেনাবড়ির বাসিন্দা আর এক ‘জাতীয় শহীদ’ মৃণাল ভৌমিকের পরিবারের ৬ জনের নামও এনআরসি থেকে বাদ পড়েছে!