কলকাতা থেকে নয় নয় করে ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মফঃস্বল শহর অশোকনগর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সেখানে নামত যুদ্ধবিমান। বছর কুড়ি আগে এমনই এক স্থান থেকে স্বপ্নের উড়ান শুরু হয়েছিল ‘অশোকনগর নাট্যমুখ’-এর। রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর ছিল তাদের ২০তম বর্ষপূর্তি। ভাল-মন্দয় মেশা এই কুড়ি বছরের যাত্রাকাল অতিক্রম করতে পারার কৃতিত্বটা, এই দীর্ঘ লড়াই লড়ার আনন্দটাই সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে চেয়েছিলেন অশোকনগর নাট্যমুখের নির্দেশক অভি চক্রবর্তী। তাই গতকাল মহা সমারোহে গোটা দিন নাট্যচর্চার মধ্যে দিয়েই দলের জন্মদিন উদযাপন হল অশোকনগর শহীদ সদনে।
রবিবার বেলা এগারোটা নাগাদ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামার অধিকর্তা সুরেশ শর্মা। সেইসঙ্গে মঞ্চে ছিলেন সাহিত্যিক অমর মিত্র, নাটককার হৃষীকেশ সুলভ, নির্দেশক প্রবীর গুহ, আশিস দাস, আশীষ গোস্বামী, সুব্রত ঘোষ, অভি চক্রবর্তী প্রমুখ। এরপরই মঞ্চস্থ হয় অশোকনগর নাট্যমুখ প্রযোজিত সঙ্গীতা চক্রবর্তী নির্দেশিত সত্যজিৎ রায়ের গল্প থেকে তৈরি নাটক ‘সুজনের গল্প’। সবমিলিয়ে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মঞ্চস্থ হয় দলের চারটি নাটক। উক্ত অনুষ্ঠানেই অশোকনগর নাট্যমুখ জীবনকৃতি সম্মান তুলে দেওয়া হয় বর্ষীয়ান নাট্যব্যক্তিত্ব অশোক মুখোপাধ্যায়ের হাতে। তাঁর হাতে পুরষ্কার তুলে দেন আশীষ গোস্বামী। বিকেলে, অশোকনগর নাট্যমুখ দ্রোণাচার্য সম্মান তুলে দেওয়া হয় নাট্যকার-নির্দেশক-অভিনেতা ব্রাত্য বসুর হাতে। তাঁকে পুরষ্কার প্রদান করেন হৃষীকেশ সুলভ।
নাট্যমুখের তরফে যে স্মারকপত্র তুলে দেওয়া হয় ব্রাত্য বাবুর হাতে। তা পাঠ করে শোনান দলের নির্দেশক অভি নিজেই। স্মারকপত্রে লেখা হয়েছে – “এই সময়ে বাংলা তথা ভারতীয় নাট্যচর্চার আপনি চর্চা এবং গবেষণার বিষয়। নাটক লেখা থেকে নাট্য তৈরি অথবা নাট্যের সংগঠনকে নতুন দিশা জুগিয়েছেন আপনি একেবারেই নিজস্ব বিশ্বাসে এবং চর্যাতে…অশোকনগর নাট্যমুখের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক অনেককালের কিন্তু এখনও তা যে কোনও শরতের মেঘের মতোই ঝলমলে এবং টাটকা। আমরা আপনাকে একলব্যের মতো দেখেছি। শিখেছি। আপনার লেখালিখি, আপনার বক্তৃতা, আপনার সঙ্গে কাটানো নানান টুকরো সময় থেকে, শিখছি আপনার অভিনয় এবং আপনার নাট্য নির্মাণ দেখেও। এই ছিল আমাদের ছাত্রজীবনের, নাট্যজীবনেরও বিশ্ববিদ্যালয়…”
পুরষ্কার পেয়ে উচ্ছ্বসিত ব্রাত্যবাবুও জানান, তিনিও নিজেকে এখনও একজন শিক্ষার্থীই মনে করেন। পাশাপাশি তিনি বলেন, থিয়েটারকে এখনও অনেকে মাইনরিটি কালচার বলে। কিন্তু এটা ঠিক নয়। থিয়েটার দেখতে কম লোক আসেন, সেটা তাদের সমস্যা। থিয়েটারের সমস্যা নয়। তাঁর সঙ্গে অশোকনগর নাট্যমুখের দীর্ঘদিনের সম্পর্কের কথাও বলেন এই প্রবীণ নাট্যকার-নির্দেশক। গতকাল নাট্যমুখ অভিনেত্রী সম্মান প্রদান করা হয় ব্রাত্য-জায়া তথা অভিনেত্রী পৌলমী বসুকে। তাঁর হাতে পুরষ্কার তুলে দেন সাহিত্যক অমর মিত্র। এছাড়াও তরুণ অভিনেতা-অভিনেত্রী-নাট্য নির্দেশক এবং ৫ তরুণ কবিকেও সম্মাননা প্রদান করা হয় নাট্যমুখের তরফে। অনুষ্ঠানের শেষ লগ্নে মঞ্চস্থ হয় অভি চক্রবর্তীর নির্দেশনায় বের্টোল্ট ব্রেশটের ‘লোহার দাম’।
(নিজস্ব চিত্র)