মাত্র এগারো মাস বয়স জিকরা মালিকের। সবে একটু বসতে শিখেছে। এখনও পর্যন্ত নিজেকে সামলানোর ক্ষমতা হয়নি তার। যে কারণে খেলতে গিয়ে আচমকাই বিছানা থেকে পড়ে তারস্বরে কান্না জুড়ে দেয় সে। এরপর তড়িঘড়ি তাকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটেছিলেন বাবা-মা। কিন্তু গলায় স্টেথো, হাতে ইঞ্জেকশন- এ হেন ডাক্তারবাবুকে দেখেই আরও জোড়ে কান্না জুড়ে দেয় ১১ মাসের জিকরা। ফলে ফুটফুটে একরত্তি শরীরে সূঁচ বেধাতে বেশ ভাল রকমের বেগ পেতে হচ্ছিল ডাক্তার-নার্সদের। অথচ দ্রুত চিকিৎসা শুরু না করলেই নয়। পায়ের হাড়ে চিড়, জখম রয়েছে হাতেও। মা কোলে তুলে আদর করলে তবেই কান্না থামে, কিন্তু ডাক্তারবাবুদের দেখলে ফের ফোঁপানো শুরু। তাহলে উপায়? শেষে বুদ্ধি বার করলেন মা নিজেই। আর সেই পথেই চিকিৎসা করলেন ডাক্তারবাবুরা। অভিনব সেই পদ্ধতি দেখে ধন্য ধন্য করল দেশ।
১১ মাসের শিশুর কাছে সবচেয়ে আপন বলতে তার মা-বাবা। এই মুখই ভালো করে চেনে সে। এর পর আপন বলতে তার প্রিয় পুতুল বা খেলনা। অধিকাংশ সময়েই কান্না থামাতে বাচ্চাদের হাতে পুতুলই তুলে দেন মায়েরা। এই ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনই উপায় বার করলেন শিশুটির মা। মাথায় টুপি, গোলাপি জামা আর গোলাপি জুতোর পুতুলটা ছিল জিকরার বড় প্রিয়। ওই পুতুল পরীকে অনুকরণ করাই অভ্যাস তার। তাই মেয়ের পায়ের চিকিৎসায় পুতুলকে কাজে লাগানোর কথা ভাবলেন তিনি। খুদের বাবাকে বাড়িতে পাঠালেন। আনলেন জিকরার প্রিয় পুতুল পরীকে। নিমেষেই কাজ হল ম্যাজিকের মতো। হাসি ফুটল মিষ্টি মুখে। এরপরই এক ‘অভিনব’ চিকিৎসা শুরু করলেন চিকিৎসকরা। একরত্তি জিকরার পরিবর্তে শুরু হল সেই পুতুলের চিকিৎসা।
প্রথমেই বুঝিয়ে শুনিয়ে জিকরার কাছ থেকে তার প্রিয় বন্ধু পরীকে চেয়ে নেন চিকিৎসকরা। এরপর সেই পুতুলের হাতে ইঞ্জেকশনের সূঁচ ফুটিয়ে, পা প্লাস্টার করে ট্রাকশন দিয়ে সেটিকে শুইয়ে দেন জিকরার পাশেই। এরপর আর বিশেষ আপত্তি করেনি জিকরা। পুতুলকে ওভাবে দেখে সাহস পায় সে-ও। রাজি হয়ে যায় পায়ে প্লাস্টার করতে। ফলে ঠিক পুতুলের মতো করেই তার চিকিৎসা করলেন ডাক্তাররা। তার পা-ও প্লাস্টার করে ট্রাকশন দিয়ে তুলে দেওয়া হল। দিল্লীর লোক নায়েক হাসপাতালের এই ঘটনার খবর ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে নেট দুনিয়ায়। জিকরা নয়, এখন ‘গুড়িয়াওয়ালি বাচ্চি’ নামেই বেশি পরিচিত সে।
শিশুটির চিকিৎসা যিনি করেছিলেন, সেই অর্থোপেডিক সার্জন ডঃ অজয় গুপ্ত জানিয়েছেন, ১১ মাসের শিশুর অস্ত্রোপচার করা মোটেও সহজ কাজ নয়। ওষুধ, ইঞ্জেকশন দেখলেই বাচ্চারা কাঁদতে শুরু করে। তখন সেই কান্না থামিয়ে চিকিৎসা করা ডাক্তারদের কাছে খুবই শক্ত কাজ। আর এই শিশুটিকে ভোলাতে পারেননি নার্সরাও। কাজেই এই পুতুল দিয়ে চিকিৎসার পদ্ধতি। আর এতে কাজও দিয়েছে চমৎকার। ফেসবুক, টুইটারে এই খবর ইতিমধ্যেই ভাইরাল। ডঃ অজয় গুপ্তর প্রশংসায় পঞ্চমুখ নেটিজেনরা। টুইটারাইটদের অনেকেই লিখেছেন, ‘শিশুরা নিষ্পাপ। ডাক্তারদের এই সহজ আর বুদ্ধিদীপ্ত পন্থা সত্যিই অভাবনীয়। দিল্লীর হাসপাতালকে স্যালুট।’