পৃথিবীর মোট চাহিদার ২০ শতাংশ অক্সিজেন সরবরাহ করে যে অরণ্য, সেই ‘পৃথিবীর ফুসফুস’এর পরিণতিতে রীতিমতো আতঙ্কিত পরিবেশবিদেরা।
স্বভাবতই অ্যামাজন পুড়ে যাওয়া নিয়ে তোলপাড় বিশ্ব। কিন্তু অ্যামাজনের পাশাপাশি নিঃশব্দে পুড়ে চলেছে পৃথিবীর দ্বিতীয় ফুসফুসও! মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জানিয়েছে, তাদের উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছে, আফ্রিকার দক্ষিণ অংশ জুড়ে একই রকম ভয়াল আগুন পুড়িয়ে দিচ্ছে অরণ্য।
কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, গ্যাবন, কঙ্গো, ক্যামেরুন এবং ম্যাডাগাস্কার জুড়ে বিস্তৃত আফ্রিকার ১০ লাখ বর্গমাইলেরও বেশি বনাঞ্চল। অ্যামাজনের পরেই বিশ্বের অক্সিজেন জোগানোর দায়িত্বে রয়েছে এই সুবিস্তীর্ণ অরণ্য। সেই কারণেই একে ‘পৃথিবীর দ্বিতীয় ফুসফুস’-ও বলা হয়। গত সপ্তাহে কঙ্গো এবং অ্যাঙ্গোলায় ব্রাজিলের চেয়েও কয়েক গুণ বেশি তীব্রতার আগুন তুমুল দাপট দেখিয়েছে বলে দাবি করছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, বিশ্বের বৃহত্তম অরণ্যগুলো এভাবে ধ্বংস হয়ে গেলে জলবায়ু পুরো ওলোটপালোট হয়ে যাবে। বহু প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দেবে অচিরেই।
নাসা স্যাটেলাইট ছবিতে ধরা পড়েছে, কঙ্গো অববাহিকার বনভূমির জ্বলতে থাকা ছবি। আমাজনের পরে কঙ্গো অববাহিকাই পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম চিরহরিৎ অরণ্য। নাসার রিপোর্টে বলা হয়েছে, কঙ্গো বেসিনের অন্তর্গত অ্যাঙ্গোলার অরণ্যে প্রায় ছ’হাজার ৯০২টি আগুন জ্বলছে, আর কঙ্গোতে প্রায় ৩ হাজার ৩৯৫টি আগুন ধরেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিরক্ষরেখা অঞ্চলের জঙ্গলেই এই ধরনের আগুনের সংখ্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। কারণ এই অঞ্চলের জঙ্গল ধ্বংস করে তা চাষজমি হিসেবে বিক্রি করা তুলনামূলক ভাবে সহজ। অভিযোগ উঠেছে, এই ধ্বংসের পিছনে বড় বড় বহুজাতিক সংস্থাগুলির মদত রয়েছে। রাষ্ট্র তাদেরই প্রশ্রয় দিচ্ছে মুনাফার লোভে।
যদিও আমাজনের দাবানলের গোড়াতেও একই দাবি উঠেছিল ব্রাজিল প্রশাসনের তরফে। কিন্তু অচিরেই নাসা জানিয়েছিল, উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছে, ইচ্ছে করে জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে অরণ্য। শুধু প্রাকৃতিক কারণে বা চাষাবাদের কারণে ধরানো আগুন থেকে ৭৫ হাজার দাবানল তৈরি হতে পারে না। তথ্য বলছে, গত বছর আমাজনে মোট দাবানলের সংখ্যা ছিল চল্লিশ হাজার। সেখানে এই বারের পরিস্থিতি অবিশ্বাস্য এবং ভয়ঙ্কর।
পরিবেশবিদদের আশঙ্কা, একই ঘটনা ঘটছে আফ্রিকার অরণ্যেও। কারণ খনিজ সম্পদের দিক থেকে আফ্রিকার কঙ্গো অববাহিকার এই সুবিস্তীর্ণ জঙ্গলও পিছিয়ে নেই। কঙ্গো অববাহিকার এই বিশাল বনভূমিতে যেভাবে আগুন ছড়াচ্ছে, তাতে আমাজনের মতোই ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে খুব তাড়াতাড়ি।