মোদী জমানায় আচ্ছে দিন এসেছে দেশের ঋণ খেলাপিদের। এতদিন এই অভিযোগ তুলে এসেছে দেশের বিরোধীরা। এবং এর জলজ্যান্ত প্রমাণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে বিজয় মালিয়া, মেহুল চোকসিদের নাম। তবে এর পাশাপাশি দেখা গেছে, ঋণের পাশাপাশি ‘জিএসটি খেলাপি’দের সংখ্যাও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে দেশে। এবার ৪৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি অঙ্কের জিএসটি জালিয়াতি নিয়ে সরব হল বাংলা। কেন এমন হল, সরকার এই জালিয়াতি রুখতে কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, আঁটঘাট না বেঁধে তাড়াহুড়ো করে যেভাবে জিএসটি চালু হয়েছে তাতে হাওলা এবং জালিয়াতির সম্ভাবনা নিয়ে সতর্ক করার পরেও কেন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, ইত্যাদি প্রশ্ন তুলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
কেন্দ্রের কাছ থেকে এ ব্যাপারে জবাবদিহি চেয়ে মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ মতো কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে কড়া চিঠি দিয়ে তদন্তের দাবি করেছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী তথা জিএসটি কাউন্সিলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ডঃ অমিত মিত্র। কেন্দ্রকে চেপে ধরতে সংসদে অর্থমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী অনুরাগ সিং ঠাকুরের জবাবকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন তিনি। সরকারি হিসেব মতো ৪৫ হাজার ৬৮২ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকার বাইরেও আরও জালিয়াতি হয়েছে বলেই মনে করছেন অমিত মিত্র। সমস্ত রাজ্যের এসজিএসটি (স্টেট জিএসটি)র তথ্য সামনে এলে তা এক লক্ষ কোটি টাকার উপর পৌঁছবে বলেই নির্মলা সীতারামকে লেখা চিঠিতে উল্লেখ করেছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ভুয়ো রসিদ পেশ করিয়ে জিএসটির ‘ইনপুট ক্রেডিট ট্যাক্স’ আদায় করার মতো জালিয়াতি তথা হাওলার মাধ্যমে টাকার নয়ছয় হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে এক বছর আগেই সরকারকে সতর্ক করেছিলেন অমিত। নির্মলাকে দেওয়া চিঠিতে সেকথা উল্লেখও করেছেন তিনি। ভুয়ো রসিদ (ইনভয়েস) পেশ করে ইনপুট ক্রেডিট ট্যাক্স আদায় করার বিষয়টি মোদী সরকারের অজানা নয়। অর্থমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী অনুরাগ সিং ঠাকুর গত ১৬ জুলাই রাজ্যসভায় এক প্রশ্নের উত্তরে লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন, ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন মাস পর্যন্ত গোটা দেশে ৪৫ হাজার ৬৮২ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকার জালিয়াতি হয়েছে। তা নিয়ে ৯,৩৮৫ টি মামলাও হয়েছে।
লিখিত জবাবে এ-ও বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের পয়লা জুলাই অর্থাৎ যেদিন জিএসটি চালু হয়েছে সেদিন থেকে ওই আর্থিক বছরেই ১ হাজার ২১৬ কোটি, পরের বছরে ৩৭ হাজার ৯৪৬ কোটি এবং চলতি আর্থিক বছরের এপ্রিল থেকে জুন, মাত্র তিন মাসেই ৬ হাজার ২০ কোটি টাকারও কিছু অঙ্কের জালিয়াতি হয়েছে। আর এই তথ্য হাতে পাওয়ার পরেই রাজ্যগুলির এসজিএসটির আনুমানিক হিসেব কষে পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে বলেছেন, এই জালিয়াতি ১ লক্ষ কোটিতে পৌঁছে যাবে। যা গোটা দেশের জন্য ভয়ায়ক। তাই কারা এই জালিয়াতি করেছে, তা জানতে শীঘ্রই এ নিয়ে তদন্ত শুরুর দাবি জানিয়েছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী।