দেশের অর্থনীতির দফারফা করে ছেড়েছে মোদী সরকার। বিপর্যয় সামাল দিতে না পেরে এখন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভাঁড়ারে হাত বসাতে হচ্ছে। কেন্দ্র যা করছে তা চুরির সমান। অর্থনীতির হাল ফেরাতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের টাকা নেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ঠিক এই ভাষাতেই সুর চড়িয়েছে বিরোধীরা। তাদের দাবি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেই দেশের অর্থনীতিতে দুর্যোগ ডেকে এনেছেন। এখন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভাঁড়ার থেকে টাকা সরিয়ে সুরাহা হবে না।
প্রসঙ্গত, সোমবার কেন্দ্রকে এক লক্ষ ৭৬ হাজার কোটির বেশি অর্থসাহায্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। বিষয়টি সামনে আসতেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে বিশেষজ্ঞ মহলে। এ নিয়ে মঙ্গলবার সকালেই টুইটারে মোদী সরকারকে একহাত নেন রাহুল। তিনি লেখেন, ‘দেশে অর্থনৈতিক বিপর্যয় ডেকে এনেছেন প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী। এখন নিজেরাই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছেন না। কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্কের টাকা চুরি করেও কোনও লাভ হবে না। কারণ এ হল ওষুধের দোকান থেকে ব্যান্ড-এড চুরি করে গুলির ক্ষত ঢাকা দেওয়ার মতো ব্যাপার।’
রাহুলের এই মন্তব্যের পরই শুরু হয়ে যায় বাগযুদ্ধ। তাঁর কথার জবাবে পাল্টা আক্রমণে গিয়ে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেন, ‘যখনই রাহুল গান্ধী চোর, চুরি, এই সব শব্দ ব্যবহার করেন, তখন আমার একটাই কথা মনে আসে। ভোটের আগেও উনি চোর-চোর-চুরি-চুরি অনেক বার বলেছেন। মানুষ ওঁকে জবাব দিয়েছেন। আবার সে সব শব্দ ব্যবহারে কী লাভ?’ তবে রাজনৈতিক ভাবে নির্মলা যতই তীক্ষ্ণ জবাব দিন, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন উঠতে পারে এ বার।
কারণ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন সাফ জানিয়েছিলেন, উদ্বৃত্ত অর্থ চরম আর্থিক সঙ্কটে কাজে লাগতে পারে। সেই টাকায় হাত দেওয়া উচিত হবে না। উর্জিত প্যাটেল, বিরল আচার্যরাও এই প্রশ্নেই আপত্তি তুলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে সরে যান। রাজনের মতে, বাড়তি ভাঁড়ার কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে গেলে আরবিআইয়ের ক্রেডিট রেটিং বা মূল্যায়ন কমতে পারে। আর তা হলে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। আবার বাংলার অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বলেন, ‘রিস্ক এলিমেন্ট ফান্ড দেশের ভবিষ্যৎ। সেই তহবিলে হাত দিয়ে দেশকে আরও বিপদের দিকে ঠেলে দেওয়া হল।’
এ নিয়ে কংগ্রেসও টুইট করে বলে, ‘কেন্দ্রকে ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকা দেওয়ার কথা জানিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। বাজেটে ঠিক এই পরিমাণ টাকার হিসাবই দেওয়া হয়নি। অত টাকা কোথায় গেল? বাজেটে তার কোনও উল্লেখ থাকল না কেন? এভাবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঘরে লুটপাট চালালে অর্থনীতি আরও ভেঙে পড়বে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ক্রেডিটও খারাপ হবে।’ তাদের অভিযোগ, শক্তিকান্ত দাসকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরের পদে বসিয়ে, কেন্দ্রীয় বোর্ডে আরএসএস নেতা এস গুরুমূর্তিতে মনোনীত করে মোদী সরকার ভাঁড়ার থেকে টাকা সরিয়ে নেওয়ার রাস্তা করেছে।
এ প্রসঙ্গে নির্মলার সাফাই, এ সবই ‘উদ্ভট’ যুক্তি। কারণ রিজার্ভ ব্যাঙ্কই বিমল জালান কমিটি গঠন করে। আর সেই কমিটির বিশেষজ্ঞরাই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভাঁড়ার থেকে সরকারি কোষাগারে টাকা পাঠানোর সুপারিশ করেন। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সেই সুপারিশ মেনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে বিরোধীদের বক্তব্য, ভাঁড়ারের ভাগাভাগির কথা সরকার এখন আত্মপক্ষ সমর্থনে মরিয়া হয়ে বলছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কোষাগার সার্বিক ভাবেই দুর্দিনের ধন হিসেবে সঞ্চয় করে রাখার কথা।
বিরোধীরা এ কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন, আরবিআই কার্যত সরকারের চাপে বাধ্য হয়েই টাকা দেওয়ার কথা মেনেছে। প্রয়াত অরুণ জেটলির আমলে অর্থ মন্ত্রক এ বিষয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে চিঠি লিখেছিল। তাই তাদের দাবি, মোদী সরকার এক সপ্তাহের মধ্যে অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করুক। দু’সপ্তাহের মধ্যে পরিসংখ্যান দিয়ে জানাক, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের টাকা কোথায়, কীভাবে খরচ হচ্ছে।