মমতার উৎকর্ষ বাংলা প্রকল্প অনেক কুড়িকে পাপড়ি মেলতে শিখিয়েছে। অপর্ণা মাল, চিন্ময় ভুঁইয়া, আর সাজিয়া খাতুন.. রাতারাতি জীবনই যেন পাল্টে গিয়েছে তিন জনের।
সোনারপুরের সাদামাটা পরিবারের মেয়ে অপর্ণা রাজ্য সরকারের সহায়তায় বিনাপয়সায় ফ্যাশন ডিজাইনিং-এর প্রশক্ষিণ পেয়েছিলেন। তার জেরেই তিনি পাড়ি দিয়েছিলেন কোরিয়ায়। সেখানে ফ্যাশন ডিজাইনিং-এ আর্ন্তজাতিক প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পেয়ে দেশের নাম উজ্জ্বল করেছিলেন। এবার নিজেই তিনি উদ্যোগপতি। শনিবার কলাকার স্ট্রিটে তাঁর ফ্যাশন গারমেন্টস বিপণীর উদ্বোধন হল। অপর্ণা বলেন, “আমি কৃতজ্ঞ উৎকর্ষ বাংলার প্রতি। একদিন শুনলাম রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় রেমন্ডস কোম্পানি অল্পবয়সীদের টেলারিং-ফ্যাশন ডিজাইনিং-এ বিনাপয়সায় প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। আমাদের তো কোনও পয়সা লাগবে না। এমনকি, দৈনিক যাতায়াত ও টিফিনের খরচও দেবে”।
অনেকটা পথ পেরোতে হয়েছে চিন্ময় ভুঁইয়াকেও। জঙ্গল মহল থেকে ঝাঁ চকচকে রিটেল বিপণীর সেলস এক্সিকিউটিভ। তাঁর বাবা চাষবাস করে ছেলের পড়াশোনা টেনেছেন বারো ক্লাস পর্যন্ত। ভোদা পিয়াশাল মহাত্মা গান্ধী স্কুল থেকে হায়ার সেকেন্ডারি পাশ করার পর বাড়িতেই বসেছিলেন চিন্ময়। সেই সময় একটি লিফলেট বদলে দেয় তাঁর জীবন। চিন্ময়ের কথায়, “একদিন গ্রামের রাস্তায় একটা গাড়ি থেকে লিফলেট বিলি করা হচ্ছিল। তখনই জানলাম যে উৎকর্ষ বাংলা প্রকল্পে সরকারি সহায়তায় বিনা পয়সায় নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া। স্থানীয় আইটিআইতে খোঁজ নিলাম। ‘স্যারেরা’ আমায় ছয় মাসের কম্পিউটার কোর্সে ভর্তি করে নিলেন”।
বেগবাগানের গলি তস্য গলি পেরিয়ে সাজিয়া খাতুনের একতলা বাড়ি। এত কিছুর মধ্যেও শিল্পীর মন নিয়ে নানা ডিজাইনের পোশাক, গয়না বানান সাজিয়া। তাঁর কথায়, “একটি সুন্দর পোশাক হল একটি মিষ্টি স্বপ্নের মতো। বিয়ের যে পোশাক আমি বানাই, তাতে তো মিশে থাকে দুলহনের স্বপ্নের ছবি”। মুরলীধর স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন সাজিয়া। এরপর উৎকর্ষ বাংলার সহায়তা বিনা পয়সাতেই প্রশিক্ষণ মিলেছিল। মুম্বইতে গিয়ে তাঁর বানানো পোশাক পরে ফ্যাশন শোতে র্যাম্পে হেঁটেছিলেন মডেলরা। হালে সাজিয়া চাকরি করছেন একটি নামী বুটিকে, কাজ থেকে বাড়িতে ফিরেও অবশ্য অবসর মেলা ভার।