বর্ধমানের প্রশাসনিক বৈঠকের শুরুতেই ‘জলশ্রী’ নামে এক নতুন প্রকল্পের কথা ঘোষনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি কেরলের হাউস বোটের মতো গঙ্গায় ভেসেছে ‘গঙ্গাশ্রী’ ও ‘জলশ্রী’ নামে দুটি হাউস বোট। কিন্তু এদিনের ‘জলশ্রী’ প্রকল্প একেবারেই আলাদা। অনাবৃষ্টি থেকে জেলার মানুষকে স্বস্তি দিতে তৈরি এই প্রকল্প।
সেচের কাজ ছাড়াও জল সংরক্ষণ এবং মাটির নীচে থাকা জল সঞ্চয় করতে রাজ্যের প্রতিটি জেলার মজে যাওয়া নদী সংস্কারের কথা ঘোষণা করেন মমতা । জলশ্রী নামে নতুন প্রকল্পের কথা ঘোষণা করে জানান, খাল–বিল–নদী এই সমস্ত জলাধারকে একসঙ্গে নিয়ে একটি জলশ্রী প্রকল্প তৈরি করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। ১০০ দিনের কাজে কচুরিপানা পরিষ্কার। বাংলা তো এমনিতেই নদীমাতৃক দেশ। সব জালাধারকে একসঙ্গে যুক্ত করে কীভাবে এটা করা যায় তা নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে। খুব ভাল প্রকল্প হবে। এবং এ থেকে অর্থ রোজগারের ব্যবস্থাও হবে।
এদিনের বৈঠকে বাজ পড়ে মানুষের মৃত্যু আটকাতে বেশি করে নারকেল গাছ লাগানোর পদক্ষেপ ঘোষণা করেন মমতা। মমতা বলেন, “ আমি এক্সপার্ট কমিটি থেকে মতামত নিতে বলেছি। যদি বাংলা জুড়ে কয়েক লাখ নারকেল গাছ লাগানো যায় তাহলে বাজ পড়ে প্রাণ হারানোর মত ঘটনা কম ঘটবে। এখানেও ১০০ দিনের লোকেদের কাজে লাগানো যাবে। তাদের দিয়ে নার্সারিতে বীজ বপনের কথা হবে। কৃষি, দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিভিন্ন দপ্তরকে একসঙ্গে নিয়ে এ কাজ করতে হবে”। তিনি বলেন, ‘গাপ্পি মাছ আমরা চাষ করতে পারি। গাপ্পি মাছ যেখানে চাষ হয় সেখানে ডেঙ্গি হয় না। কারণ, ওই মাছ ডেঙ্গির লার্ভা খেয়ে ফেলে। মশা খেয়ে নেয়। গাপ্পি মাছ কত চাষ হয় এই জেলায়? এই মাছচাষ বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি। রাজ্যে তিন কোটি গাপ্পি মাছ ছাড়া হচ্ছে। উত্তর ২৪ পরগনায় বেশি ডেঙ্গি হচ্ছে, সেখানে বেশি করে গাপ্পি মাছ ছাড়া হবে। বাংলাদেশে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। ওরা তো ওখান থেকেই যাতায়াত করে। তাই আমাদের দেশেও তো হচ্ছে। তাই ওই দিকটায় বেশি করে চাষ করা হোক গাপ্পি মাছের।
গতকাল প্রশাসনিক বৈঠক শুরুর আগে সংস্কৃতি লোকমঞ্চের সভাঘরে দলীয় বিধায়ক, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, জেলা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে এক বৈঠক ডাকেন মুখ্যমন্ত্রী। এই দলীয় বৈঠকে কোনওরকম অজুহাত ছাড়াই জনসংযোগের ওপর জোর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। কিসান ক্রেডিট কার্ড, জব কার্ড–সহ প্রতিটি প্রকল্পকে ধরে ধরে মুখ্যমন্ত্রী খোঁজ নেন। জব কার্ড নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি জানান, জব কার্ড পেয়েছেন অথচ অনেকে কাজ পাননি বলে তিনি অভিযোগ পাচ্ছেন।
মমতা খোঁজ নেন জেলার কৃষিসেচ নিয়েও। তিনি জানান, ২৮০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে বিশ্বব্যাঙ্কের আর্থিক সহায়তায়। এই টাকার মধ্যে পূর্ব বর্ধমান জেলার জন্যই ৫৬০ কোটি টাকা ব্যয় করে সেচনালা সংস্কার, দামোদরের বাঁধ নির্মাণের কাজ হবে। এতে বন্যা প্রতিরোধ এবং কৃষির উন্নতি হবে। ১০০ দিনের কাজে জলাজমির উন্নতির নির্দেশ দেন তিনি। বর্ধমান পুরসভাকে সাফসুতরো করার ওপর এবং শহরের মধ্যে দিয়ে যাওয়া সাবজোলা সংস্কারের কাজ শুরুর ঘোষণা করেন তিনি। এদিন ২৭৭ কোটি টাকার ৪১টি প্রকল্পের শিলান্যাস এবং প্রায় ১৫৩ কোটি টাকার নতুন ৪০টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তিনি। ছিলেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, স্বপন দেবনাথ, সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরি, সভাধিপতি শম্পা ধাড়া, সহ–সভাধিপতি দেবু টুডু, জেলাশাসক বিজয় ভারতী প্রমুখ।