প্রাকৃতিক প্রাচীর ম্যানগ্রোভ অরণ্য। জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য রক্ষার সঙ্গে সঙ্গে ম্যানগ্রোভ হল সামুদ্রিক ঝড়ঝাপটা থেকে আড়াল করার প্রাকৃতিক ঢাল। আর সেই ঢালকে ধ্বংস করেই চলছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আবাস যোজনার কাজ। ফের প্রশ্ন এবং বিতর্কের মুখে মোদী সরকারের পদক্ষেপ।
একা উষ্ণায়নে রক্ষে নেই, দূষণ দোসর। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে একেই নাজেহাল অবস্থা বিশ্ববাসীর। তার সাথে পাল্লা দিয়ে রোজই বাড়ছে পরিবেশ দূষণ। এই সাঁড়াশি চাপে বিপদের আশঙ্কা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব উষ্ণায়ন রোধে সারা বিশ্ব যখন সবুজায়নের উদ্যোগ নিচ্ছে, চারা গাছ বিতরণ হচ্ছে, বৃক্ষ রোপণ হচ্ছে, তখনই গঙ্গাসাগরে উঠল মাটি কেটে ম্যানগ্রোভ নষ্ট করে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বাড়ি তৈরির অভিযোগ। সমুদ্রপাড় থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরে ম্যানগ্রোভের জঙ্গল কেটে আবাস যোজনার বাড়ি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে বেশ কিছুদিন আগে। পরিবেশবিধি না-মেনে যিনি বা যাঁরা ওই বাড়ি তৈরির কাজে যুক্ত, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এমনটাই জানানো হয়েছে প্রশাসনের তরফে।
তবে এহেন কার্যকলাপের দায় সম্পূর্ণ এড়িয়ে গিয়েছে বিজেপি কর্তৃপক্ষ। ‘‘কয়েক জন উদ্বাস্তুর জন্য প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির কাজ চলছিল। প্রচুর গাছ কেটে বাড়ি তৈরি চলছে বলে যা বলা হচ্ছে, তত বেশি গাছ কাটা হয়নি। কোনও অন্যায় করিনি,’’ বলছেন গঙ্গাসাগর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান হরিপদ মণ্ডল। গঙ্গাসাগরের ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক সুদীপ্ত মণ্ডল জানান, ম্যানগ্রোভ ধ্বংসের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। হরিপদ বাবু যতই দায় এড়িয়ে যান না কেন, ম্যানগ্রোভ ধ্বংস করে যেভাবে কাজ চলছিল তার নিন্দায় সরব হয়েছেন সকলেই।
উল্লেখ্য মোদী সরকারের বিরুদ্ধে গাছ কাটার অভিযোগ এই প্রথম নয়। সূত্রের খবর, ২০১৪-২০১৯-এর মধ্যে সারা দেশের প্রায় ১.০৯ কোটি গাছ কাটা পড়েছে। তার মধ্যে শুধু ২০১৮-১৯-এর মধ্যেই ২৬.৯১ লক্ষ গাছ কাটা হয়েছিল, যা এপর্যন্ত সর্বাধিক। কেন্দ্রের সাফাই, বিকাশের স্বার্থেই নাকি যাবতীয় আইন মেনে ওই গাছগুলি কাটার নির্দেশ দিয়েছিল পরিবেশ মন্ত্রক। সংসদে যে তথ্য পরিবেশ মন্ত্রক দিয়েছে তাতে জানা যাচ্ছে, ২০১৪-১৫-র মধ্যে ২৩.৩ লক্ষ, ২০১৫-১৬-র মধ্যে ১৬.৯ লক্ষ, ২০১৬-১৭-র মধ্যে ১৭.০১ লক্ষ এবং ২০১৭-১৮-র মধ্যে ২৫.৫ লক্ষ গাছ কাটা হয়েছিল। এ তথ্য প্রকাশ্যে আসতেই এখন দেশজোড়া নিন্দার ঝড়ের মুখে পড়তে হচ্ছে মোদী সরকারকে।