বাংলায় কথা বলতে পারেন না, বুঝতেও পারেন না। তবে জন্মদিনে তিনি খাঁটি বাঙালি। বন্ধুদের নিমন্ত্রণ করে বাঙালির প্রিয় পদ খাওয়ান। তিনি— রবিন দত্ত। জার্মানির বাঙালি কোচ। দমদমে আদি বাড়ি হলেও তাঁর জন্ম ও বড় হয়ে ওঠা জার্মানির কোলন শহরে।
জার্মানির জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে খেলার স্বপ্ন পূরণ হবে না বুঝতে পেরে মাত্র তিরিশ বছর বয়সেই খেলার পাশাপাশি কোচিং শুরু করেন এফসি লিয়নবার্গে। সাত বছর পরে প্রথম বার পেশাদার দল স্টুটগার্ট কিকার্সের দায়িত্ব নেন। কিন্তু ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীরা তাঁকে চিনলেন আরও এগারো বছর পরে। যখন তাঁর কোচিংয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলল বায়ার লেভারকুসেন। তাঁর কোচিংয়ে খেলেছেন জার্মানি জাতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক মাইকেল বালাকের মতো তারকা। গ্রুপ পর্বে হারিয়েছেন চেলসিকে। জার্মানি ফুটবল ফেডারেশনের স্পোর্টস ডিরেক্টরও ছিলেন তিনি।
ষাটের দশকের শুরুতে কলকাতা ছেড়ে স্টুটগার্টে পাকাপাকি ভাবে চলে আসা সব্যসাচী দত্ত ও তাঁর জার্মান স্ত্রী রোজমেরির একমাত্র ছেলে রবিন। অনেক চেষ্টা করেও কলকাতার কথা খুব একটা মনে করতে পারলেন না রবিন। বললেন, ‘‘বছর তিরিশেক আগে শেষ বার কলকাতায় গিয়েছিলাম। জার্মানিতে ফুটবল কোচের কাজটা খুব কঠিন। ছুটি প্রায় পাওয়াই যায় না। মরশুম শেষ হওয়ার পরেও ফুটবলারেরা ছুটি পায়, কোচেরা নন। তাই কলকাতায় যেতে পারিনি। ইচ্ছে আছে আগামী বছর যাওয়ার।’’
২০১১-’১২ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোয় বার্সেলোনোর বিরুদ্ধে দুই ম্যাচে ১০ গোল খাওয়ার পরেই বরখাস্ত হন তিনি। দায়িত্ব নেন ওয়ের্ডার ব্রেমেনের। সেখানেও একটা মরসুমের বেশি থাকতে পারলেন না। গত মরশুম থেকে বুন্দেশলিগা দ্বিতীয় ডিভিশনের ক্লাব বোখুম-কে কোচিং করাচ্ছেন। ১৭১ বছরের পুরনো ক্লাবকে ঘিরেই ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেছেন তিনি। বোখুমে কোচিংয়ের পাশাপাশি ফুটবলারদের মেন্টরও তিনি।
তিন দশকের বেশি সময় ধরে কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে গেলেও বাঙালি খাদ্যের প্রতি টানটা এখনও থেকে গিয়েছে জার্মানির বাঙালি কোচের। বললেন, ‘‘সপ্তাহে ছ’দিন আমি জার্মান। তবে রবিবার বাঙালি হয়ে যাই। আমার বাবা আগে রান্না করতেন। বছর দু’য়েক হল প্রয়াত হয়েছেন। আমি যদিও রান্না করতে পারি না। আমার ভরসা এখানকার ভারতীয় রেস্তোরাঁগুলোই। আমার জন্মদিনে বন্ধু ও ঘনিষ্ঠদের নিমন্ত্রণ করে বাঙালি খাবারই খাওয়াই। ওরা দারুণ খুশি হয়।’’