আজ ডুরান্ড কাপ ফাইনালে মুখোমুখি মোহনবাগান এবং গোকুলম। কুড়ি বছর পর ডুরান্ড কাপ পালতোলা নৌকোয় তোলার সুযোগ। বিশ্বের যে কোনও কোচই দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যময় এই খেতাব জেতার জন্য মরিয়া হবেন, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু গত কয়েক দিন কিবুকে দেখে মনে হয়েছে ফ্রান মোরান্তেদের কোচ এই ট্রফি জেতার জন্য যেন সর্বস্ব পণ করে বসে আছেন। ‘‘যে কোনও টুনার্মেন্টের ফাইনালে খেলাই স্পেশ্যাল। আর এই ট্রফি জয়টা আমার চেয়েও ক্লাবের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি তো এই ক্লাবের একজন সৈনিক মাত্র,’’ বলার সময় বোঝা যায় কতটা পেশাদার তিনি। পড়শি ক্লাবের স্প্যানিশ কোচ আলেসান্দ্রো মেনেন্দেস দু’দিন আগে ব্যর্থ হয়ে অন্ধকারে চলে গিয়েছেন, মরসুমের শুরুতেই এ রকম মঞ্চে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য একটা ফাইনাল-জয় যে তাঁকে আকাশে তুলে দেবে, সেটা জানেন অভিজ্ঞ কিবু। আর সে জন্যই বৈচিত্রময় কর্নার থেকে নাগাড়ে পেনাল্টি অনুশীলন—ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে কোনও অস্ত্রেই শান দিতে বাকি রাখেননি কিবু।
ফাইনাল যুদ্ধের আগে অনুশীলনে কোনও খামতি রাখেননি ভিকুনা। পকেট থেকে একবার করে কাগজ বার করছেন, তার পর ডেকে নিচ্ছেন সেখানে লিখে রাখা বাছাই করা তিন-চার জন ফুটবলারকে। যে ফুটবলারদের ডেকে নিচ্ছেন তাদের দিয়ে করাচ্ছেন নানা ধরনের ‘সিচুয়েশন মুভ’। কখনও ডাউন দ্য মিডল রান, কখনও উইং প্লে, কখনও হঠাৎ করে ভিতরে ঢুকে প্রতিপক্ষকে ধোঁকা দেওয়ার কৌশল রপ্ত করা— শুক্রবার বিকেলে মেঘলা আকাশের নীচে এ ভাবে অন্তত পঁচিশ রকম ‘মুভ’ শেখানো হল সালভা চামোরোদের এবং সেটা করা হল সংবাদ মাধ্যমকে মাঠের বাইরে বার করে দিয়ে। মোহনবাগান কোচ কিবু ভিকুনার বাঁ পকেটে থাকা ওই সাদা কাগজে ‘যুদ্ধ’ জেতার অস্ত্র সাজিয়ে দিয়েছেন ভিডিও অ্যানালিস্ট নীতেশ সিংহ। ডুরান্ড কাপ শুরুর আগে যাঁকে মুম্বই থেকে উড়িয়ে এনেছেন সবুজ-মেরুন কর্তারা।
ঐতিহ্যশালী এই ট্রফি জেতার ব্যাপারে মোহন বাগানের সবথেকে বড় কাঁটা ভঙ্গুর রক্ষণ। ফ্রান মোরান্তের উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। লেফট ব্যাক গুরজিন্দার কুমারের হেডে দুর্বলতা রয়েছে। এছাড়া চার ডিফেন্ডারের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাবও সুস্পষ্ট। ছ’টি ম্যাচে মোহন বাগান খেয়েছে হাফ ডজন গোল। গোল করেছে ন’টি। ছ’টি ম্যাচের মধ্যে ক্লিনশিট মাত্র দু’টি ম্যাচে। মোহন বাগানের মূল সমস্যা হল রাগবি ট্রেনার আনা। ফুটবল টিমের কন্ডিশনিং সম্বন্ধে তাঁর কোনও ধারণাই ছিল না। গত দশ দিন সম্মিলিত সিদ্ধান্তে জনসন আর সক্রিয় নন। এতে মোহন বাগানের চোট সমস্যাও এখন কম। যদিও ফ্রান গঞ্জালেজ মুনোজ বৃহস্পতিবার রাতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে ড্রিহাইড্রেশন থেকে বাঁচাতে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে স্যালাইন দেওয়া হয়। যদিও শুক্রবার পুরোদমে ট্রেনিং করেছেন তিনি। ফাইনালে পরিবর্ত হিসাবেই মুনোজকে নামানো হবে।
তুমুল প্রস্তুতি চলছে গোকুলমেও। কোচ ফের্নান্দো সান্তিয়াগো বারেলা যদিও বলছেন, ‘‘এই ফাইনাল স্নায়ুর লড়াই। সেই যুদ্ধে যারা জিতবে কাপটা হাতে তুলবে তারাই।’’ স্পেনীয় কোচ কৌশলী ভাবে যোগ করেন, ‘‘মোহনবাগানে সালভা চামোরো, জোসেবা বেইতিয়া, ফ্রান মোরান্তের মতো ফুটবলাররা রয়েছে। ঘরের মাঠে খেলায় এগিয়ে মোহনবাগানই।’’ উঠে আসে উবেইদের কথাও। যা শুনে তিনি বলেন, ‘‘রক্ষণের পিছনে উবেইদ থাকায় ভরসা বাড়ে। ইস্টবেঙ্গলের পরে মোহনবাগান। তাই জিততে গেলে নিজেদের সেরাটাই দিতে হবে। আমাদের যে পরিকল্পনা সে ভাবেই খেলে ম্যাচটা বার করতে চাই।’’