বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে মোদী সরকারের বাজেটে যেমন তেমন কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি। ঠিক তেমনই চাহিদার মানোন্নয়নেও কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে পারেনি কেন্দ্র। আর এই দুই কারণেই একদিকে যেমন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে ভারতের শিল্প সংস্থাগুলোকে, তেমনি এই অবস্থায় কার্যত তলানিতে পৌঁছেছে পরিকাঠামো বৃদ্ধিও। সবমিলিয়ে এবারের শারদীয়ার বাজারে ব্যাপক মন্দার ছায়া। যে কারণে দুর্গাপুজোয় জাঁকজমকের বহর কাটছাঁটের সমূহ সম্ভাবনা দেখছেন কলকাতার বড় পুজো উদ্যোক্তাদের অনেকেই।
জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় এখনও পর্যন্ত কর্পোরেট জগতের বিজ্ঞাপনী আশ্বাস উৎসাহজনক নয়। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে টিডিএস কেটে জোগানদারদের টাকা মেটানোর আয়কর নির্দেশিকার ঝক্কি। যা শুনে বেঁকে বসছেন প্রান্তিক শিল্পী ও শ্রমিকরা। পুজো আয়োজনের সামগ্রিক খরচ উঠবে কি না, তা ভেবেই অস্থির বহু পুজো কমিটি। অনেকে আবার গত বছরের ‘আর্থিক পিছুটান’ সামাল দিতে গোড়াতেই বাজেট কাটছাঁট করেছেন। পরিস্থিতি না-ঘুরলে বাড়তি চাঁদার আবেদন নিয়ে পল্লিবাসীর কাছে হাত পাততে হতে পারে- এমন আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি যা, তাতে আড়ম্বরের বরাভয় দিতে পারেন একমাত্র দুর্গতিনাশিনীই।
রাজ্যের হেভিওয়েট মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পৃষ্ঠপোষকতায় নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘ বেশ জাঁকজমক করেই থিম পুজো করে। পুজোর ২৭-২৮টি গেট হয় প্রত্যেক বার। আর সব কটাই বিজ্ঞাপনে ছেয়ে যায়। তবে এবার এখনও পর্যন্ত মাত্র পাঁচ-ছটা গেটের বুকিং পাওয়া গিয়েছে। এ প্রসঙ্গে পুজো কমিটির কর্তা বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত বলেন, ‘রবিবার জরুরি বৈঠক ডেকেছি। গত বছর থেকেই স্লো-ডাউন শুরু হয়েছিল। ফলে কিছু ব্যাক লগ থেকে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত বড় কর্পোরেটগুলো হাত গুটিয়ে রেখেছে। অন্যান্য বছর যারা পুজোর দু’মাস আগেই বিজ্ঞাপন পাকা করে দেয়, তারাও এখনও পর্যন্ত সে ভাবে কথা দেয়নি। তাই ভয় পাচ্ছি। দামী উপকরণ নয়- বাঁশ, মালসা, কলসিতেই মন্ডপ সাজাব। ২৫ শতাংশ বাজেট ছেঁটেই পরিকল্পনা শুরু করেছি।’
একই উৎকণ্ঠা টালা বারোয়ারির সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ভট্টাচার্যের গলাতেও। তিনি বলেন, ‘বাজার খুব অনিশ্চিত। অন্য বছর ৩০টা গেটের সবকটাই বিজ্ঞাপনে ভরে যায়। এবার মাত্র তিন-চারটের বুকিং পেয়েছি। এমনিতেই যে পুজোগুলো গ্ল্যামারাস এবং বড় রাজনৈতিক নেতাদের মুখ সামনে আছে, সেগুলো কর্পোরেট বিজ্ঞাপনের সিংহভাগটাই টেনে নেয়। ফলে মাঝারি পুজোগুলোর বিজ্ঞাপনে টান পড়ে। অর্থনীতি ধুঁকলে বড় কোম্পানিগুলো তো প্রথমেই তাদের বিজ্ঞাপন খরচ কাটছাঁট করে। তাই হচ্ছে।’ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের পুজো সুরুচি সঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক স্বরূপ বিশ্বাসের খোলাখুলিই জানান, ‘যাঁরা আমাদের বড় করে পুজো আয়োজন করতে সহযোগিতা করেন, তাঁরা এবার কেমন যেন ভয়ে সিঁটিয়ে গিয়েছেন।’
কমিটিগুলো টিডিএস সংক্রান্ত নির্দেশিকা নিয়েও একই রকম ঝক্কির কথা বলছে। বরাহনগরের নেতাজি কলোনি লো-ল্যান্ডের পুজোর কর্তা, তৃণমূল নেতা দিলীপনারায়ণ বসুর কথায়, ‘প্যান্ডেলওয়ালা বলছে, টিডিএস কাটলে পেমেন্ট নেব না। অর্থাৎ তার ভাগের টিডিএসটা আমাদেরই জমা দিতে হবে। এটা আমরা জোগাড় করব কোত্থেকে?’ আবার বেহালা বড়িশা ক্লাব পুজো কমিটির সভাপতি, তৃণমূল নেতা সুদীপ পোল্যের কথায়, ‘৪০০টা বাঁশ যে লোকের বাঁশঝাড় থেকে আমি কেটে আনব তাকে যদি টিডিএস কেটে পেমেন্ট দিতে যাই, সে তো বলবেই আপনাকে বাঁশ নিতে হবে না। কারণ বাঁশের বিক্রেতা টিডিএস খায় না মাথায় দেয়, সেটা জানেই না। এবার বিজ্ঞাপনেও মন্দা। অবস্থার বদল না-হলে চেনা লোকজনের কাছ থেকে ধার-দেনা করতে হবে।’