গাড়ি বিক্রি যে ক্রমাগত কমছে এবং সংস্থাগুলি যে বড় সমস্যার সামনে দাঁড়িয়ে, তা আগেই স্পষ্ট। কেন্দ্রীয় বাজেট পেশের পরই বসে গিয়েছিল গাড়ি ব্যবসার চাকা। আর গাড়ি বিক্রিতে ধস নামার ফলে চরম বিপাকে যন্ত্রাংশ উৎপাদনকারী সংস্থাগুলিও। কিন্তু সম্প্রতি গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির সংগঠন সিয়াম জুলাইয়ের যে বিক্রির পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে, তা ঠান্ডা স্রোত বইয়ে দিয়েছে অর্থনীতির শিরদাঁড়ায়।
জানা গেছে, জুলাইয়ে গত ১৯ বছরের সব থেকে কম বিক্রি দেখেছে ভারতের গাড়ি শিল্প ক্ষেত্র। এবং দীর্ঘমেয়াদি এই মন্দার ফলে প্রায় ১৫ হাজার কর্মী কাজ হারিয়েছে। এবার কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটল আরও কিছু গাড়ির যন্ত্রাংশ সংস্থা। পাশাপাশি সিএমআইই-র সমীক্ষাও জানাল, এই অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে নথিভুক্ত সংস্থাগুলির (আর্থিক নয়) নিট বিক্রি বৃদ্ধির হার তার আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় মাত্র ২.৭ শতাংশ। যেখানে গত অর্থবর্ষের সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে তা ছুঁয়েছিল ২৩.৪ শতাংশ।
এই পরিস্থিতিতে শিল্প যখন ত্রাণ প্রকল্পের আশায় তাকিয়ে কেন্দ্রের দিকে, তখন এ নিয়ে তাদের বিঁধলেন দেশের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কৃষ্ণমূর্তি সুব্রহ্মণ্যন। বললেন, ত্রাণের ওপরে নির্ভর না করে বরং নিজের পায়ে দাঁড়াতে চেষ্টা করুক সংস্থাগুলি। আর তার পরেই বৃহস্পতিবার হুড়মুড়িয়ে ৫৮৭.৪৪ পয়েন্ট পড়ল সেনসেক্স। দাঁড়াল ৩৬,৪৭২.৯৩ অঙ্কে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুব্রহ্মণ্যনে বক্তব্যে ত্রাণের দাবি খারিজেরই বার্তা ছড়িয়েছে। তাই পড়েছে সূচক।
বুধবার মুম্বইয়ে সুব্রহ্মণ্যন বলেন, ১৯৯১ সালের সংস্কারের পরে তিন দশক কাটতে চলেছে। এ বার কেন্দ্রের ওপরে নির্ভরতা কমিয়ে স্বাবলম্বী হোক বেসরকারি ক্ষেত্র। এর পরে বৃহস্পতিবারও তিনি একই বার্তা দেন নয়াদিল্লীতে। আবার প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শমীকা রবি বলেন, ‘আমরা কাঠামোগত সঙ্কটে ভুগছি। বড় সংস্কার জরুরি।…অর্থ মন্ত্রকের হাতে অর্থনীতির দায়িত্ব দেওয়া মানে সংস্থার বৃদ্ধির ভার অ্যাকাউন্টস দফতরের হাতে ছাড়া।’
অন্যদিকে, ভারতের বাজারের আকাশে মন্দার মেঘ দেখে মুখ খুলেছেন, নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান রাজীব কুমারও। কোনও রাখঢাক না করেই তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, ‘তীব্র নগদ সমস্যায় পড়েছে ভারতীয় অর্থনীতি। গত সত্তর বছরে এতো বড় সংকটে পড়েনি সরকার।’ রাজীব কুমার বলেছেন, ‘বাজার এমনই আন্দোলিত হয়ে রয়েছে যে কেউ কাউকেই বিশ্বাস করছে না। আস্থার ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এমন নয় এটা শুধু সরকার ও বেসরকারি ক্ষেত্রের মধ্যে হয়েছে। প্রাইভেট সেক্টরেও একে অপরকে কোনও রকম ধার দিতে চাইছে না।’