লোকসভা ভোটের ‘ভ্রষ্টাচারী নম্বর ওয়ান’ বলে রাজীব গান্ধীকে কাঠগড়ায় তুলেছিলেন তিনি। কোনও তথ্য প্রমাণ ছাড়াই অভিযোগ করেছিলেন, ‘ব্যক্তিগত হলিডে ট্রিপে’ ভারতীয় নৌসেনার যুদ্ধজাহাজ ‘আইএনএস বিরাট’কে ব্যবহার করেছিলেন দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব৷ মঙ্গলবার সেই রাজীবের ৭৫-তম জন্মদিনেই সকাল সকাল টুইট করে শ্রদ্ধা জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী! আর অন্যদিকে রাজীবকে সামনে রেখেই দিনভর নাম না করে মোদীকে বিঁধে গেলেন তাঁর দুই পুত্র-কন্যা রাহুল গান্ধী-প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা। ছেড়ে কথা বললেন না প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও।
গতকাল সকালে বীরভূমিতে রাজীবকে শ্রদ্ধা জানাতে তাঁর সমাধিতে যান সোনিয়া গান্ধী, রাহুল-প্রিয়াঙ্কা। ছিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ও। এর পাশাপাশি সংসদ ভবনে রাজীবের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে সোনিয়া-রাহুলদের সঙ্গে হাজির ছিলেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা, বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা লালকৃষ্ণ আডবানী এবং বিজেপির সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামীও। দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষ্যে গতকাল সকালে নিজের টুইটার হ্যান্ডলে মোদী লেখেন, ‘আমাদের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা।’
আর বাবাকে স্মরণ করে রাহুল-প্রিয়াঙ্কাও টুইট করেন, যেখানে বাবাকে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি ছিল পরোক্ষে মোদীর প্রতি কটাক্ষ। রাহুল লেখেন, ‘আমার বাবা কখনও ঘৃণা করতে শেখাননি। ক্ষমা করতে ও সকলকে ভালবাসতে শিখিয়েছেন।’ আর বাবার সঙ্গে ছোটবেলার একটি ছবি পোস্ট করে প্রিয়াঙ্কা লেখেন, ‘বাবার থেকে শিখেছি, মানুষের গল্প শোনো। তাঁরা ভিন্নমতের পোষণ করলেও তাঁদের জন্য জায়গা রাখো। শিখেছি, পথ যতই কঠিন হোক না কেন, হাসিমুখে কী ভাবে এগিয়ে যেতে হয়।’
অন্যদিকে, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও গতকাল সকালে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘দেশ বলতে যা বোঝায়, তাতেই নিহিত আছে রাজীব গান্ধীর মূল্যবোধ। সেটি হল ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টি, সহিষ্ণুতার ভাবনা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতি দায়বদ্ধতা আর সকলের জন্য সমবেদনা।’ এরপরই নাম না করে বিজেপিকে তাঁর তোপ, ‘গত কয়েক বছর ধরে দেশে অসহিষ্ণুতা, সাম্প্রদায়িকতা আর হিংসা বাড়ছে। ঘৃণাকে কাজে লাগিয়ে কিছু গোষ্ঠী এবং দল নিজেদের হাতে আইন তুলে নিয়ে রাজনীতির ক্ষতি করছে।’
দেশবাসীর কাছে তিনি এই আবেদন জানান যে, ‘রাজীব গান্ধীর কাছে দেশের ঐক্য ও অখণ্ডতার থেকে বড় কিছু ছিল না। সেটি রক্ষা করতে আমাদের সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে।’ টুইটারে মোদীকে বিঁধলেও গতকাল গান্ধী পরিবার ব্যস্ত ছিল নানা সমাজসেবামূলক কাজে। সারা দিনই কখনও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের স্কুটি বিলিতে, পড়ুয়াদের জন্য ‘স্কিল ল্যাব’ চালু করতে, কখনও বা ল্যাপটপ বিলি করতে দেখা গেছে সোনিয়া-রাহুল-প্রিয়াঙ্কাদের। রাজীব নিয়ে একটি প্রদর্শনীরও উদ্বোধন হয়েছে গতকাল।