তিনি শুধু প্রতিশ্রুতিই দেন না। তা পূরণও করেন। জনকল্যানমুখী কোনও প্রকল্পই হোক বা বাংলার গৌরব বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে কোনও বৃহৎ কর্মকান্ড- সব কাজই করেন সমান তালে। মঙ্গলবার যেমন বিশ্বের সর্বপ্রথম শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু মিউজিয়ামের উদ্বোধন করলেন তিনি অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শান্তি ও ভালোবাসার বার্তা ছড়াতেই ষোড়শ শতকের সন্ত এবং বৈষ্ণব প্রথার প্রতিষ্ঠাতা চৈতন্যদেবের ওপর নির্মিত এই সংগ্রহশালা। যা সর্বসাধারণের জন্য আজ, ১৪ই আগস্ট থেকে খুলে দেওয়া হবে।
গতকাল বাগবাজার সার্বজনীন দুর্গাপুজা প্রাঙ্গণে এই মিউজিয়ামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। বক্তব্যের শুরুতেই মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এখানে উপস্থিত সকল মহারাজ, ভক্তদের ও বাগবাজার পুজো কমিটিকে শুভেচ্ছা। বাগবাজার পুজো প্রাঙ্গণ সারা ভারতের সংস্কৃতি, রাজনীতির, সমাজনীতির সেতুবন্ধনের জায়গা। এখানকার পুজোয় অনেক মনীষীরা এসেছেন। আমি গর্বিত শ্রী চৈতন্য সংগ্রহশালা সারা ভারতে তথা বিশ্বে প্রথম বাংলায় তৈরী হল। আপনাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
চৈতন্যদেব সম্পর্কে বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কয়েকশো বছর ধরে শ্রী চৈতন্যদেব আমাদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। তিনি পাঁচশো বছর আগেও ভেদাভেদহীনতার কথা বলেছিলেন। সর্বধর্ম সমন্বয়ের কথা বলে গেছেন। সকল মনীষীরা যুগে যুগে একই বার্তা দিয়েছেন। আমাদের জগত চলমান। পার্থিব মানুষ চলে যাবে কিন্তু তাঁর চিন্তন থেকে যাবে। যে সকলকে বড় ভাবে, সেই বড় হয়। যে বড় হয়, তাকে অনেক অত্যাচার সহ্য করতে হয়। রাজা রামমোহন রায় যখন সতীদাহপ্রথা বন্ধ করতে গেছিলেন, তাঁকেও অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছিল।
এর পাশাপাশি তিনি জানান, ‘আমায় যারা প্রশ্ন করেন আমার ধর্ম কী? আমি তাদের বলি, আমি মনুষ্যত্বে বিশ্বাস করি। মহাপ্রভু সব ধর্ম-জাতির মানুষকে সঙ্গে নিয়ে চলতে শিখিয়েছেন। এটাই বাংলার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি।’ এরপরই বিজেপিকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, ‘বাংলার, মেধা, সংস্কৃতি, মানবিকতা নিয়ে অনেকের হিংসা আছে। ভারতের অন্য কোনও প্রদেশকে বাংলা হিংসা করেনা, এটা বাংলার শিক্ষা, এটা বাংলার সভ্যতা, এটা বাংলার সংস্কৃতি। ওরা তাই বাংলাকে হিংসা করে।’ স্পষ্টতই তিনি জানিয়ে দেন, ‘ওদের কাছে আমি আমার হিন্দুত্বের প্রমাণ দেব না।’
এরপরই নাম না করে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করে মমতা বলেন, বাংলাকে হিংসা করো না, বাংলাকে ভয় দেখিওনা। দেশ স্বাধীন হওয়ার সময় গান্ধীজী কলকাতায় ছিলেন। বাংলা যুগে যুগে শান্তির ধারা বহন করছে। যাঁরা দিল্লীতে বসে বলে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গাপুজো করতে দেয়না, তাদের বলি আমার আমলে বাংলায় লক্ষ দুর্গাপুজো হয়, ঘরে ঘরে লক্ষ্মীপুজো হয়, গণেশ পুজো হয়, ছট পুজো হয়, চৈতন্য মহাপ্রভুর পুজা হয়। এরপরই তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘বাংলাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে লাভ নেই। এ রাজ্যে হাজার হাজার দুর্গা পুজো হয়। সেইসঙ্গে পুজো কার্নিভ্যালও হয়।’
সেইসঙ্গে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি, আমার থেকে বেশি হিন্দু তীর্থ সংস্কার তোমরা করতে পারোনি।’ তাঁর কথায়, নবদ্বীপে আমরা সংস্কৃত টোল করছি। সেখানে ৭০০ একর জমির ক্লিয়ারেন্স দিয়ে দিয়েছি। সেই জমির ওপর ইস্কন মন্দির তৈরী করা হবে। মিউজিয়ামের জন্য সরকার থেকে ৫০ লাখ টাকা দেওয়া হবে এছাড়া সাংসদ তাঁর এমপি ল্যাড থেকে আরোও ৫০ লাখ টাকা দেবেন। মিউজিয়ামের জন্য বাড়ির ব্যবস্থা করে দেবে সরকার। বাগজারের জন্য কলকাতা কর্পোরেশন থেকে একটা গেট তৈরী করা হবে। বাগবাজারে তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর ধর্মীয় ট্যুরিজম হাব করবে।