প্রথম মোদী সরকারের শেষ লগ্ন থেকেই মন্দা চলছিল গাড়ির বাজারে। তারপর ফের একবারের জন্য বিজেপি ক্ষমতায় ফিরতেই পথে বসে যায় গাড়ি ব্যবসার চাকা। শুধু তাই নয়। গাড়ি বিক্রিতে ধস নামার ফলে বিপাকে পড়েছে যন্ত্রাংশ উৎপাদনকারী সংস্থাগুলিও। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থায় অস্তিত্ব রক্ষার একমাত্র উপায় হিসেবে কর্মী ছাঁটাইকেই বেছে নিচ্ছে তারা। অবস্থা এতটাই গুরুতর যে, এপ্রিল মাস থেকে চলতি মাসের মধ্যে কাজ হারিয়েছেন সাড়ে তিন লক্ষ কর্মী। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। আগামী দিনে ১০ লক্ষ কর্মী ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা করছে গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরির সংস্থাগুলি। উদ্বেগ বুকে নিয়ে এখন তাদের চোখ গাড়ি শিল্পের সংগঠন সিয়াম জুলাইয়ে বিক্রির কী হিসেব দেয়, সে দিকে। যা প্রকাশিত হবে আগামী কাল।
প্রসঙ্গত, বিভিন্ন সংস্থা অবশ্য আলাদা আলাদা ভাবে ওই মাসে বিক্রিবাটা নিয়ে হতাশার ছবিই দেখিয়েছে। তবু সিয়ামের বার্তায় শিল্পের ঘুরে দাঁড়ানোর কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায় কিনা, চাতক পাখির মতো এখন সেই অপেক্ষাতেই প্রহর গুনছে গাড়ির যন্ত্রাংশ শিল্প। বিশেষত রবিবার যেখানে সংবাদ মাধ্যমের একাংশের খবর, ঝাড়খণ্ডে গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানার এক কর্মী সম্প্রতি গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। সূত্রের খবর, ওই সংস্থাটি টাটা মোটরসকে যন্ত্রাংশ সরবরাহ করে। যেটুকু জানা গিয়েছে তাতে প্রকাশ, প্রভাত নাথ নামের ২০ বছরের ওই যুবক ছিলেন সংস্থাটির অটো রিকশ চালক। কিন্তু মাস খানেক আগে ছাঁটাই হন কাজ থেকে।
জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরেই নানা পারিবারিক সমস্যা চলছিল তাঁর। ভুগছিলেন অবসাদে। প্রভাতের আত্মীয়দের দাবি, আগেও দু’বার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। তবে তাঁদের অনেকের অভিযোগ, কফিনে শেষ পেরেক গেঁথে দেয় যন্ত্রাংশ সংস্থাটি থেকে কাজ হারানো। যা গাড়ি বিক্রি তলানিতে ঠেকার পরে ধাক্কা খাওয়া যন্ত্রাংশ শিল্পে চাকরি ছাঁটাইয়ের অঙ্গ। সংবাদ মাধ্যমের খবর, ওই সংস্থাটি এ বছর তিন দফায় কারখানা বন্ধ রেখেছিল। প্রভাত-সহ অনেককে ছাঁটাই করে তারা। আত্মীয়দের একাংশ অবশ্য বলছেন, কাজ হারানো তাঁর আত্মহত্যার একমাত্র কারণ নয়।
গাড়ির যন্ত্রাংশ সংস্থাগুলির সংগঠন অ্যাকমার দাবি, গাড়ি শিল্পের উপর ভর করে বেড়ে ওঠে তারা। বিভিন্ন গাড়ি সংস্থা ১৫-২০ শতাংশ উৎপাদন কমানোয় তাই এই বিপদ। বেশ কিছু গাড়ি সংস্থা উৎপাদন সাময়িক বন্ধ রাখছে। একই পথে হাঁটছে বশের মতো সহযোগী যন্ত্রাংশ সংস্থাও। অ্যাকমার প্রেসিডেন্ট রাম বেঙ্কটরামানির আশঙ্কা, এই পরিস্থিতি চললে কাজ হারাতে পারেন ১০ লক্ষ মানুষ। হিসেব বলছে, এই মুহূর্তে শুধু গাড়ির যন্ত্রাংশ সংস্থাগুলিতেই কাজ করেন প্রায় ৫০ লক্ষ কর্মী। বেঙ্কটরামানি বলেন, ‘বেশির ভাগ যন্ত্রাংশ নির্মাতাই সঙ্কট জুঝতে কাজের দিন কমাচ্ছে। চাকরিও গিয়েছে অনেকের। তবে সেটা যতটা সম্ভব কম করার চেষ্টা হচ্ছে। কারণ, একবার হারালে ফের দক্ষ কর্মীদের ফিরে পাওয়া মুশকিল।’