কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই প্রাণনাশের হুমকি মধ্যে পড়তে হয় তার বড় উদাহরণ বলিউড পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপ। যখনই তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি বিরুদ্ধ কথা নিয়ে সরব হয়েছেন টুইটারে তখনই এসেছে হুমকি। বাকস্বাধীনতার ওপর নেমেছে খাঁড়া। তাই এবার তিনি নিজেই সরে গেলেন টুইটার থেকে। তাঁর বাবা-মাকে ফোন করে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, মেয়েকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ধর্ষণেরও ভয় দেখানো হচ্ছে—এই সব কারণেই এমন সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন অনুরাগ।
প্রসঙ্গত, শনিবার অনুরাগ দু’টি টুইট করেন। প্রথম টুইটে তিনি লেখেন, ‘যখন আপনার বাবা মা-কে লাগাতার ভয় দেখানো হবে, সন্তানকে অনলাইনে হুমকি দেওয়া হবে, আপনাকে বুঝতে হবে আপনি কথা বলুন, এমনটা কেউ চায় না। হিংসার রাজ শুরু হয়েছে। নতুন ভারতে সকলকে শুভেচ্ছা।’ এর কিছুক্ষণ পরেই বিদায়ী টুইটটিতে তিনি লেখেন, ‘প্রত্যেককে শুভকামনা জানাই। এটাই আমার শেষ টুইট। কারণ টুইটার ছাড়ছি আমি। নির্ভয়ে মনের কথা বলতেই যদি না পারি, তাহলে কথা না বলাই ভাল। বিদায়।’ আর তারপরই তিনি নিজের টুইটার হ্যান্ডেল ডিলিট করে দেন।
উল্লেখ্য, সোশ্যাল মিডিয়ায় বরাবরই নিজের রাজনৈতিক মত প্রকাশ করে এসেছেন অনুরাগ। মাসুলও গুণতে হয়েছে মতপ্রকাশের জন্যে। জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা রদ করার কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও মুখ খুলেছিলেন অনুরাগ। নিজের টুইটে তিনি সরাসরি কারও নাম না করে লেখেন, ‘১২০ কোটি মানুষের ভাল কী ভাবে হবে সেই সিদ্ধান্ত একজন একা নিলেন, এই ঘটনা ভয়ের।’ এর পরেই আসতে থাকে হুমকি। যার জেরে একপ্রকার বাধ্য হয়েই এমন সিদ্ধান্ত নিলেন খ্যাতনামা পরিচালক।
দেশ জুড়ে ‘ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা’ এবং রামের নামে ‘উস্কানিমূলক রণহুঙ্কার’ বন্ধের অনুরোধে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের একাংশ গত ২৩ জুলাই যে চিঠি দেন, তাদের মধ্যে ছিলেন অনুরাগও। এর জেরে টুইটার-এ প্রাণনাশের হুমকি পান। নিজের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে অনুরাগের উদ্দেশে এক ব্যক্তি লেখেন, কিছুদিন আগেই তিনি নিজের রাইফেল
এবং শটগান পরিষ্কার করে রেখেছেন। অনুরাগের সঙ্গে সামনাসামনি হওয়ার জন্যও অপেক্ষা করে রয়েছেন তিনি।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হারিয়ে, লাগাতার এই হিংসার সঙ্গে মোকাবিলা করতে একপ্রকার ব্যর্থ হয়ে টুইটার থেকে সরে যাওয়াকেই আপাতত শ্রেয় মনে করছেন, বিখ্যাত বলিউড পরিচালক। এইভাবে ধীরে ধীরে সরকার বিরুদ্ধ আওয়াজ তোলা বন্ধ হয়ে যাবে বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। সরকারের সমালোচনা করলেই এভাবে প্রাণনাশের হুমকির স্বীকার শুধু একা অনুরাগ নন, আরও বিশিষ্টজনদেরও এই হুমকির স্বীকার হতে হয়েছে এবং হচ্ছে। এখানেই প্রশ্ন ‘স্বাধীন ভারতে’ আমরা কি সত্যিই ‘স্বাধীন’? দেশের আবহাওয়ায় ঘুরছে প্রশ্ন।