নিজের দেশে পরাধীন থাকার যন্ত্রণা ভারতবাসী পেয়েছে। সেই যন্ত্রনায় কাতর হয়েছে। আর তার সঙ্গে বেড়েছে কেড়ে নেওয়ার ইচ্ছা। নিজের দেশকে ছিনিয়ে নেওয়ার বাসনা। অনেক ছোট-বড় সংগ্রাম হয়েছে। প্রতিবাদ উঠেছে দেশে। কখনও অস্ত্র হাতে, আবার কখনও বা বল পায়ে। সারা দেশে যখন স্বাধীনতা লড়াইয়ের ঝড় উঠেছে তখন কোথায় গিয়ে বাঙালিদের মধ্যে ছিল সবথেকে বেশি। সবচেয়ে বেশি প্রতিরোধ উঠেছে বাংলা থেকে। আর সেই বাংলাতেই প্রথম বল পায়ে ইংরেজদের নাস্তানাবুদ করেছিলেন ১১ জন বাঙালি। ১০৮ বছরের ইতিহাস আজও গর্ব জাগায় বাঙালি হিসেবে।
সেই জন্ম একটি ক্লাবের। যাঁর ১১ জন বাঙালি, ইংরেজদের হারিয়ে প্রথমবারের জন্য আইএফএ শিল্ড জিতেছিল। খেলোয়াড়দের মাথায় তুলে চলল ৮০ হাজার দর্শকের উল্লাসনৃত্য। জয়োল্লাসের মিছিলে তখন সস্তা চটকের বদলে জাতীয়তাবাদী শ্লোগান। একটি দল হয়ে উঠলো গোটা একটি দেশ। সেই দলই হল মোহনবাগান। প্রথম ভারতীয় জাতীয় দল। ‘আমরাও পারি’ এই মন্ত্রে ভারতবাসীকে দীক্ষিত করেছিলেন শিবদাস ভাদুড়ি, অভিলাষ ঘোষ, কানু রায়ের মতো মানুষরা। খালি পায়ে ১১ জোড়া বুটের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন তাঁরা। ক্ষত বিক্ষত পায়ে মাঠে ইংরেজদের দর্প চুরমার করে দিয়েছিলেন এই এগারো জন।
উত্তর কলকাতার ফড়িয়াপুকুরে মিত্র, সেন ও বসু পরিবার এই ক্লাবের প্রতিষ্ঠা করেন। কিরটী মিত্রের বাড়ি মোহনবাগান ভিলায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় ক্লাবটির নাম রাখা হয় ‘মোহনবাগান স্পোর্টস ক্লাব’, পরবর্তীতে যার নাম হয় ‘মোহনবাগান অ্যাথলেটিক ক্লাব’। ক্লাবের প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন বসু পরিবারের নামী আইনজীবী ভূপেন্দ্রনাথ বসু। ১৮৯৩ সালে এই ক্লাবের কোনো টুর্নামেন্টে যাত্রা শুরু। ১৮ বছর পর ১৯১১ সালে যখন সারা দেশে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে আন্দোলিত তখন এই ১১ জন বাঙালি অন্যভাবে আন্দোলন শুরু করেন। হাতে অস্ত্র নিয়ে নয়, পায়ে বল নিয়ে। ইডেন গার্ডেন্সের মাঠে ৮০ হাজার দর্শককে সাক্ষী রেখে ব্রিটিশদের শেষ করে দেন তাঁরা।
ইতিহাসে মোহনবাগানকে খোঁজা নিষ্প্রয়োজন, কেননা মোহনবাগান নিজেই একটি ইতিহাস। সবুজ-মেরুন জার্সি মানেই প্রবল প্রতিজ্ঞায় এগিয়ে যাবার উদ্যম। মোহনবাগান তাই একটি দল নয়, একটি আবেগ, একটি দেশ। তাঁদের জয় ছিল বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদ। ছিল স্বাধীনতার অঙ্গ। মোহনবাগানের প্রতিষ্ঠা দিবসই পরবর্তীতে হয়ে ওঠে দেশের স্বাধীনতা দিবস। ঘটনাটি কাকতলীয় হলেও তাৎপর্যপূর্ণ। মোহনবাগানের সঙ্গে জড়িত আবেগ, ভালোবাসা প্ৰতিটি বাঙালির মননে ঢুকে আছে। মোহনবাগানের লড়াই মানে বাঙালির লড়াই, দেশের লড়াই।