ছিটমহলের বাসিন্দারা খাতায়কলমে কলকাতা পুরসভার ভোটার। কিন্তু বছরের পর বছর তাঁরা কর দিয়ে আসছেন পড়শি পুরসভায়। কলকাতার উপকণ্ঠে থেকেও নাগরিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে বঞ্চিত ওঁরা। পানীয় জলের লাইন, ড্রেনেজ কানেকশন পর্যন্ত মিলছে না। কলকাতার ভোটার হলেও আজও কলকাতার নাগরিক হতে পারেননি ওঁরা।
নবান্ন সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে কলকাতার এই ‘ছিটমহল’ বাসীদের দীর্ঘ দিনের বঞ্চনা দূর করতে সম্প্রতি উদ্যোগী হয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। যে-সব এলাকায় এই ধরনের সমস্যা রয়েছে, সেগুলিকে চিহ্নিত করে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। রাজ্য সরকারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কলকাতা পুরসভার এলাকা পুনর্বিন্যাসের কাজ শুরু হয়েছে। ‘ছিটমহল’বাসীদের তালিকা তৈরির পাশাপাশি ওই সব এলাকায় জমি জরিপও শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে রাজ্য ভূমি দফতরের আধিকারিকদের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। নতুন করে কলকাতা পুর-এলাকার সীমানা নির্ধারণ করা হবে। সেই কাজ শেষ হলেই ওই সব এলাকায় পানীয় জল, নিকাশি সংযোগ, রাস্তায় আলো, জঞ্জাল সাফাই এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে শুরু করবে কলকাতা পুরসভা।
পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত কলকাতা পুরসভার ১১২, ১০৯ এবং ১৪৪ নম্বর ওয়ার্ডে এই ধরনের এলাকা রয়েছে। টালিগঞ্জ বিধানসভার অধীন ১১২ নম্বর ওয়ার্ডের গা-ঘেঁষে রয়েছে সোনারপুর-রাজপুর পুরসভা। এখানকার প্রায় ২৫০ পরিবার বহু দিন ধরে সোনারপুর-রাজপুর পুরসভায় সম্পত্তিকর জমা দেন। যদিও তাঁরা কলকাতা পুরসভার ভোটার। স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর অনিতা কর মজুমদার জানান, তাঁর ওয়ার্ডের সারদামণি পার্ক, সুকান্ত সরণি, নিবেদিতা পার্ক, বিজন কানন এলাকায় বহু পরিবার রাজপুর-সোনারপুর পুরসভায় সম্পত্তিকর জমা করেন। এই ধরনের ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৭০০। তিনি বলেন, “এঁরা সবাই আমার ওয়ার্ডের ভোটার হলেও এলাকায় কোনও কাজ করা যাচ্ছে না। কাউকে জলের লাইন অথবা ড্রেনেজ কানেকশন দেওয়া যাচ্ছে না। এমনকী কেএমডিএ-কে দিয়ে রাস্তা করাতে গিয়েও আটকে গিয়েছি”।
সারদামণি পার্কের বাসিন্দা অমিতকুমার শীল বলেন, ‘দাদুর আমল থেকে আমরা এখানে বাস করছি। আমরা কলকাতা পুরসভার ১১২ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার। কিন্তু আমাদের মতো পাড়ার অনেকেই জলের লাইন নিতে পারছে না। কারণ, প্রথম থেকেই আমরা রাজপুর-সোনারপুর পুরসভায় ট্যাক্স জমা দিই। অতীতে আমরা অনেক চেষ্টা করেও এই সমস্যা মেটাতে পারিনি। এখন আবার নতুন করে পুরসভা থেকে চেষ্টা চলছে। সমস্যা মিটলে আমার মতো অনেক পরিবারই উপকৃত হবে।’
একই সমস্যায় জর্জরিত যাদবপুরের ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের অর্জুন পার্ক, গ্রিন ল্যান্ড, সুবর্ণ বিহার, অম্বালিকা, প্রগতি আবাসন, বাঁশরী হাউসিংয়ের বাসিন্দারা। অর্জুন পার্কের বিধান রায় বলেন, “১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার তালিকায় আমার নাম রয়েছে। কিন্তু অনেক বছর ধরে আমরা সোনারপুর-রাজপুর পুরসভাকে ট্যাক্স দিই। সে জন্য কলকাতা পুরসভা ওয়াটার কানেকশন দিতে রাজি হচ্ছে না। সাব-মার্সিবল পাম্প চালিয়ে জল তুলতে হয়। পুরসভা যদি আমাদের জন্য কিছু একটা সমাধানের রাস্তা বের করে, খুবই উপকৃত হব”।