‘এমনই বরষা ছিল সেদিন’
সকাল থেকেই অঝোর ধারা জানান দিচ্ছে আজ বাইশে শ্রাবণ। বিশ্ব কবির প্রয়াণতিথি। ৭৮ বছর আগে এমনই এক মাঝ শ্রাবনে ঝমঝম বৃষ্টি মাথায় নিয়ে রবীন্দ্রনাথ চিরবিদায় নিয়েছিলেন পৃথিবী থেকে। রবীন্দ্রনাথের মতো মহান ব্যক্তিত্ব, তিনি আজও বাঙালি তথা বিশ্ববাসীর কাছে অমলিন। আগামী প্রজন্মও তাঁকে আগলে রাখবেন। কারণ তাঁর সৃষ্টি, তাঁর কীর্তি জীবন্ত।
নোবেলজয়ী রবীন্দ্রনাথ সকলের মধ্যে বেঁচে থাকেন প্রতি মুহূর্তে। কারণ এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া দুস্কর যিনি তাঁর সব অনুভুতি গুলোর সঙ্গে কবিগুরুর গানের সামঞ্জস্য পান না। তাই নাস্তিক বাঙালির একমাত্র ঠাকুর ‘রবি ঠাকুর’। মৃত্যুর এত বছর পরও এই মানুষটি প্রতি মুহূর্তে জীবন্ত। তবু বাস্তবকে তো মানতেই হয়।
১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবন তাঁর মহাপ্রয়াণ। অধুনিক প্রজন্মের বাঙালি কয়েকটা বাংলা তারিখ মনে রাখেন। তাঁর মধ্যে একটা আজকের দিনটা। আর যেসব বাড়িতে এখনো পুরোনো রেডিয়ো টা আছে, বা বাড়ির বয়স্ক সদস্যটি সকালে উঠে, ‘ধায় যেন মোর সকল ভালোবাসা, প্রভু তোমার পানে’ চালান। তারাই ভালোবেসে রবীন্দ্রনাথকে আকড়ে থাকেন।
অবিরাম বৃষ্টিতে রাজ্যজুড়ে তাঁর প্রয়াণতিথি পালন করা হচ্ছে৷ জোড়াসাঁকোতেও আজ সারাদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রয়েছে৷ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকেও আজ বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছ৷ সকালে নিমতলা ঘাটে কলকাতা পুরসভার পক্ষ থেকে কবির প্রয়াণ দিবস পালন করা হয়৷ সেখানে কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা জানন মেয়র ফিরহাদ হাকিম, চেয়ারপার্সন মালা রায় প্রমুখ৷
এদিন শান্তিনিকেতনে উপাসনা গৃহে বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণের মধ্যে দিয়ে কবিকে স্মরণ করলেন ছাত্রছাত্রীরা৷ অঝোর ঝরা শ্রাবণের এমন একটা দিনে রবীন্দ্রনাথ বিদায় নিয়েছিলেন পৃথিবী থেকে। আজ উনআশি বছর পরেও, সেই বিষাদ সঙ্গীতের মূর্ছনা শান্তিনিকেতন–শ্রীনিকেতন তথা বোলপুরবাসীদের কাছে এই দিনটির একটি স্বতন্ত্র তাৎপর্য ও মাত্রা আছে। এদিন ভোরে গৌর প্রাঙ্গনে বৈতালিকে যোগ দেন ছাত্রছাত্রীরা৷ গান গাইতে গাইতে আশ্রম পরিক্রমা করেন তাঁরা৷ সকাল সাতটায় রবীন্দ্রসঙ্গীত, বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণের মধ্যে দিয়ে কবিকে স্মরণ করা হয়৷ প্রতিবারের মতো এবারও এই দিনটিতে বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে বিশ্বভারতীতে৷ বিকেলে সেখানে বৃক্ষরোপণ করা হবে৷
অনেকেরই অভিমত, মৃত্যু শোক নিয়ে বাড়াবাড়ি না করাই ভালো। তবে মুষ্টিমেয়, যাদের কাছে রবীন্দ্রনাথ প্রথম ও শেষ প্রেম, তাঁদের কথা আলাদা। তাঁরা গান, সঞ্চয়িতা, ভগ্নহৃদয়, গীতবিতান নিয়েই এই দিনটি কাটিয়ে নিজের মতো করে ভালো থাকেন, নিজের মতো যাপন করেন গানে, প্রাণে, কবিতায়, কাব্যে… আর কখনো আপন মনেই হয়তো কবি গুরুর কাছে শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায়, নিঃস্বার্থ বন্ধুত্বের কাছে আবদার করে বসেন, ‘চির সখা হে, ছেড়ো না মোরে’।