সুষমা স্বরাজ পৃথিবীর যে কোনেই ভারতীয় আটকে পরুক না কেন, ঠিক ফিরিয়ে আনতেন। কিন্তু যে পরবাসে সুষমা স্বরাজ স্বায়ী নাগরিকত্ব নিয়ে চলে গেলেন, সেখান থেকে ঘরে ফিরিয়ে আনতে পারেন এমন কোন বিদেশমন্ত্রী আর নেই। অপরাহ্ন তটে পাসপোর্ট ভিসা ও লাগেনা। সুষমা স্বরাজ ও আর নেই যে বিদেশমন্ত্রকে। না, আর একটা টুইট করলেই দেশের মন্ত্রী বিদেশে আটকে পরা কারোর জন্য আর এই অবস্থায় কিছু করতে পারবে না। করা সম্ভব ও নয় যে।
জিন্দেগী ক্যায়সি হে পহেলি হায়ে! যে মানুষটি রাত ৮.৪৫ অবধি খবরের চ্যানেল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখেছেন, টুইট করেছেন কাশ্মীর নিয়ে, কুলভূষণ যাদব এর হয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা লড়া ব্যারিস্টার হরিশ সালভের সাথে ফোনে কথা বলেছেন, তাকে আবার বলেছেন এই রবিবার বাড়ি আসতে চায়ের আড্ডাতে আর মামলা লড়ার পারিশ্রমিক একটাকা নিয়ে যেতে, তিনিই রাত ১০.৪৫ মিনিটে ডিক্লেয়ারড ডেড।
রাজনৈতিক জীবনের বাইরে ও এক অদ্ভুত মিষ্টি প্রেমের সম্পর্ক ছিল স্বামী স্ত্রী এর। ভ্যালেন্টাইন্স ডে-এতে জন্মেছিল স্ত্রী, মজা করে বলতো মিস্টার কৌশল। দুজনেই খুব কম বয়সে সংসদীয় রাজনীতিতে এসেছিলেন। স্বরাজ কৌশল ছিলেন সবচেয়ে কমবয়সী রাজ্যপাল আর উনি সেই বছরের কনিষ্ঠতম সাংসদ৷ এরপর দীর্ঘদিন ওনারা আলাদা থেকেছেন দুটি শহরের কাজের সূত্রে। সেই কবে লং ডিস্টেন্স রিলেশ টিকিয়ে রাখার জাদু শিখিয়ে গেছেন পরের প্রজন্মকে। টুইটারে বর-বউ এর খুনসুটি চলতো, এ শহর কখন যে এ শহরের আঙুল ছুঁয়ে যেত। অবসরের পরে দুজন মিলে থাকার জন্য একটা ভারী মিষ্টি ফ্ল্যাট কিনেছিল যন্তরমন্তর এলাকাতে। সেই ফ্ল্যাটের বারান্দায় দাঁড়িয়ে ঝলমলে এক ছবি ও দিয়েছিল ওরা। খুব বেশী দিন নয়।
দিল্লির প্রথম মহিলা মূখ্যমন্ত্রী, প্রথম পুরোসময়ের মহিলা বিদেশমন্ত্রী, লোকসভায় প্রথম মহিলা বিরোধী দলনেতা, প্রথম মহিলা মুখপাত্র কোন ভারতীয় রাজনৈতিক দলের, গোটা দেশে বিজেপির প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী ও জাতীয় মুখ সুষমা স্বরাজ। মহিলারা তার শাড়ির নিচে জ্যাকেট পরার কায়দা ছাড়াও আরো অনেক কারণে তাকে আদর্শ হিসেবে মেনে নিতে পারতেন। বিশ্বদরবারে বাকি দেশের পুরুষ বিদেশমন্ত্রীদের মাঝে এক আটপৌরে, বড় লাল টিপ ভারতীয় নারী।
কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট হওয়ার পরে সিদ্ধান্ত নেন রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার। আরএসএস এর কট্টরপন্থী ভাবমূর্তিকে মূলস্রোতে আনার অবদান ও দাবি করতে পারতেন উনি, ললিত মোদিকে বিদেশে পালাতে সাহায্য করার বদনামে ও।
কিন্তু টুইটারে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী ভারতীয়-র মসিহা, বিদেশে যে কোন অনুকূল পরিস্থিতি থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার দ্বায়িত্বে থাকা এক বিদেশমন্ত্রী এবার আর সুষমাজীকে নিজের ঘরে ফিরিয়ে আনতে পারবেন না। ও দেশ থেকে ফিরিয়ে আনা যায় না নাকি। তাছাড়া সুষমা স্বরাজ আর বিদেশমন্ত্রী ও যে নেই।
ক্যাপশনের ঋণ স্বীকার: Sagar Shila Paul
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত