ঘুমের মধ্যে মানুষের চোখের সামনে ভেসে ওঠে কিছু চিত্র। যার সঙ্গে কখনও মিল থাকে, আবার কখনও থাকে না। সেই চিত্রগুলোকেই আমরা স্বপ্ন বলে জানি। তবে কি আমরা জানি যে আমাদের ঘুমের মধ্যে এই স্বপ্ন কেন চলে আসে? সেই কারণটিই যিনি সুকৌশলে ব্যাখ্যা করেছিলেন সেই ব্যক্তিটিই হল সিগমুণ্ড ফ্রয়েড। এই মনোবিদের ব্যাখ্যাতেই আমরা সচেতন ও অবচেতন মনের পার্থক্য বুঝতে পেরেছি। সেই মহান মানুষ আজও তাই মানুষের সচেতন বা অবচেতন মনে জায়গা করে নিয়েছেন। কোনো মনোবিদ ফ্রয়েডকে ছাড়া তাঁদের সাফল্য ভাবতে পারেন না।
আর এই অসংখ্য সফল মানুষের মূলে যে কান্ডারি আছেন তাঁর জীবন বা তাঁর মনের হদিশ কি পাওয়া গেছে কখনও? প্রতিদিনের জীবন ছিল তাঁর অন্য এক ছুতোয় বাধা। যেখানে ডাক্তারদের কাছে সিগারেট ছিল বিষ, সেখানে নিজে ডাক্তার হয়ে সেই সিগারেটই ছিল তাঁর কাছে অমৃত। ২৪ বছরে প্রথম সিগারেট খাওয়ার অভিজ্ঞতা তাঁকে রোমাঞ্চিত করে। সেই রোমাঞ্চ তাঁকে আজীবন ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। শুরুতে তিনি সিগারেট খেতেন, এরপর তিনি সিগার সেবনকারী হয়ে ওঠেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, ধূমপান তার কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করতো এবং পরিমিত ধূমপানের মাধ্যমে তিনি আত্ম-নিয়ন্ত্রণের চর্চা চালিয়ে যেতে সক্ষম হন। তিনি এও বলেছেন, “চুমু খাওয়ার জন্য কেউ না থাকলে সিগারেট ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই।”
আবার যাঁরা প্রথমেই সিগারেট না খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাঁদের জন্য তিনি দুঃখপ্রকাশও করেছেন। এইরকম আমুদে মানুষ সচার আচার দেখা যায় না। তাঁর জীবনে এই এত ব্যস্ততার মধ্যেও তাঁর এই টুকরো টুকরো রসিকতা তাঁর প্রতিভাকে আরও বিকশিত করত। তাঁর জীবন ছিল কিছু নিয়মের গন্ডিতে বাধা। সকাল ৭টার দিকে তিনি ঘুম থেকে উঠে নিজেকে তৈরি করে নিতেন। তারপর আটটা থেকে দুপুর পর্যন্ত রোগী দেখতেন। দুপুরের খাবার পর বিকাল তিনটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত আবার রোগী দেখতেন। তাঁর জীবনই ছিল রোগীদের নিয়ে। বাহ্যিক আনন্দ বলতে ছিল সিগারেট। সবসময়ই তাঁর মাথায় থাকত চিন্তার স্রোত। সেই স্রোতেই তিনি হারিয়ে যেতেন। কাজ ছাড়া জীবন স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ কখনই হতে পারে না এটাই ছিল তাঁর বিশ্বাস।
এই কাজ পাগল মানুষটির শেষ জীবন কেটেছে খুব কষ্টের মধ্যে দিয়ে। ক্যান্সারের মতো মারণরোগ তাঁকে হানা করেছিল। সেই রোগই তাঁকে মৃত্যুর কোলে ঠেলে নিয়ে যেতে থাকে। এই বিখ্যাত মনোবিদও শেষ জীবনে এক অবসাদে চলে গিয়েছিল। ক্যান্সারের যন্ত্রনা তাঁকে কাহিল করে দিয়েছিল। আর সেই যন্ত্রনা থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে নিজের জীবন নিজেই শেষ করার সিদ্ধান্ত নেন। তাই ৫৭ বছর বয়সী ফ্রয়েড আত্মহত্যা করে চির ঘুমে চলে যান। আজও তিনি তিনি ‘স্বপ্নের রূপকার’ হয়ে বেঁচে আছেন আমাদের মধ্যে।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত