ঢাকুরিয়া সেকেন্ড লেনের কোন দিদিমা যেন তিনি এই প্রজন্মের কাছে। সাধারণ শাড়ি আর হাই পাওয়ারের চশমা চোখে পুরনো দিনের গল্প বলতে পারে। দোকতা পান খান কিনা তা জানা নেই৷ মায়াবিনী রাতে তিন নম্বর সরকার মানে বামফ্রন্ট সরকার, তৃণমূল সরকারের পরেই যে সরকারের নাম উচ্চারিত হয় সেই পারিবারিক সরকারের থেকে সর্বোচ্চ পুরস্কার পেলেন। এমন এক সময় পুরস্কৃত হলেন যখন তার সহনাগরিক সব মেতে আছে জনৈক নোবেল বা রুদ্রনীল ঘোষ কন্ঠীকে নিয়ে। বাকিরা টিকটকের পাঞ্জাবি গানে।
আমরা বাঙালিরা সত্যি অভাগা, কিংকর্তব্যবিমূঢ় এক জাত। আমরাই আশা, লতাকে নিয়ে উদবাহু নৃত্য করি আবার আমরাই নিদারুণ তাচ্ছিল্য করি তাদেরকে এক সময় যারা টক্কর দিয়েছে সেই সব কন্ঠ নিয়ে। কী সব মানুষের সংস্পর্শে এসেছে এই সন্ধ্যা বলে মানুষটি। এটি কানন আর উস্তাদ বড়ে গুলাম আলী খান সাহেবের কাছে তালিম নেওয়া, তারপর উত্তম- সুচিত্রার একের পর এক গান। সুচিত্রার কন্ঠে কালজয়ী সব গান যা আজ ও শুনলে মনে হয় বসন্তের খোলা জানালা দিয়ে বাতাস এসে পরলো বাবার রিডিং টেবিলে, স্যন্ডো গেঞ্জি আর লোডশেডিং এ, কৃষ্ণচূড়া আর জুঁইফুলের মালায়। ওই তো কোন রেডিও তে আকাশবাণী কলকাতা বলছে কেউ।
কিছুক্ষন আরো না হয় রহিবে কাছে… এই কথাটা গেয়ে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে প্রেম সঞ্চারিত হয়েছিল৷ আমি তাদের কথা বলছি যারা মায়ের হারমোনিয়াম, দাদুর এলপি রেকর্ড, দিদার সুপুরি কাটার জাঁতি খুব সামলে রাখে এই গানটার মতো। রবীন্দ্রনাথ সামলে রেখেছে, তার দেরাজ, ধুলোমাখা গানের খাতা সামলে রেখেছে। কোন ছোকরা কোন গানকে জাতীয় সঙ্গীত করতে বললো তাতে কিচ্ছু এসে যায় না।
হলিউডের রেফারেন্স বার বার টানতে ভালো লাগেনা। বম্বে হলে ও বিএমডাব্লু গাড়ি চেপে সন্ধ্যা মুখার্জি পুরস্কার নিতে আসতেন। তার এ জীবদ্দশায় যত গান তিনি গেয়েছেন আর লোকে শুনেছে তার থেকে দশ টাকা ও যদি প্রতিবার তিনি পেতেন আজ তার বালীগঞ্জে নেওটিয়াদের পাশেই বাড়ি হতো৷ নবীনা সিনেমার উল্টোদিকে না।
ঘুম চাঁদ ঝিকিমিকি তারা এই মাধবী রাত, আসেনিতো বুঝি আর জীবনে আমার। না আমার জীবদ্দশায় সন্ধ্যা মুখার্জির মতো সংগীতশিল্পী ছুঁয়ে দেখার সৌভাগ্য হয়নি। তিনি যতদিন বেঁচে, ওনাকে মাথায় তুলে রাখার ও সুযোগ হয়নি। কেবল আপশোশ রয়ে গেছে বাঙালির বন্ধনে জড়ানোর সুন্দর স্বর্ণালী সন্ধেগুলো গেল কই!
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত