নতুন শহর, নতুন কলেজ, নতুন মানুষজন, নতুন আদবকায়দা আর ইংলিশ না বলতে পারার হীনমন্যতা- এই সব মিলে ফের মুছে গেল এক উঠতি স্বপ্ন হৃষীক কোলে। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ পদার্থবিদ্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফল করা ওই ছাত্র। কিন্তু কলেজে ক্লাস শুরু ২ দিনও কাটল না, তার মধ্যেই আত্মঘাতী হল ওই ছাত্র। উদ্ধার হয়েছে সুইসাইড নোটও, যেখানে সে লিখেছে, “এখানে সবই হাই প্রোফাইল সোশ্যাইটির। সব ক্লাসই ইংরেজিতে পড়ানো হয়। মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। এখানে মানিয়ে নিতে পারছি না। বাড়িতে জানালে বাপি বকবে”।
তবে উচ্চ মাধ্যমিকে ইংরাজীতে ৮০% নম্বর পাওয়া ছাত্র শুধুমাত্র ইংলিশ ভাষা নিয়ে সমস্যার জন্যে এরকম পদক্ষেপ নেবে তা মানতে নারাজ তাঁর শিক্ষকেরা। মানতে পারছেন তাঁর শোকার্ত মা-বাবাও। তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁদের ছেলে অধ্যাপক হতে চেয়েছিল তাই সে অবসাদগ্রস্ত হয়ে নিজেকে শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে একথা তারাও মেনে নিতে পারছেন না।
সেন্ট জেভিয়ার্সের অধ্যক্ষ ফাদার ডমিনিক স্যাভিও বলেন, ‘‘হস্টেল সুপারের কাছে হৃষীকের সমস্যার কথা শুনেছিলাম। তবে এই নিয়ে ওর সঙ্গে কথা বলার আগেই যে এমন দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটে যাবে, সেটা ভাবতে পারেনি। আমরা মর্মাহত।’’ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা নাগাদ বেনিয়াপুকুর থানা এলাকার আচার্য জগদীশচন্দ্র বোস রোডে জেভিয়ার্সের হস্টেল থেকে বেরিয়ে হৃষীক আর ফেরেননি বলে অভিযোগ জানান ছাত্রাবাস-কর্তৃপক্ষ। পরে ওই নিখোঁজ পড়ুয়ার বাবা কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মুরলীধর শর্মার দ্বারস্থ হন।
পুলিশ জানায়, হৃষীক বৃহস্পতিবার সকালে হস্টেলের রুমমেটকে বলেছিলেন, সহপাঠীরা ক্লাসে ইংরেজি আর হিন্দিতে কথা বলায় তিনি মানাতে পারছেন না। তার পরেই বালতি কেনার নাম করে তিনি হস্টেল থেকে বেরোন। পরে কলেজে যাননি, হস্টেলেও ফেরেননি। হস্টেল সুপার জোসেফ কুলান্ডি রাতেই হৃষীকের স্থানীয় অভিভাবক এবং সিঙ্গুরের বাড়িতে ফোন করেন। কিন্তু ওই পড়ুয়া ওই দুই জায়গায় যাননি শুনে হস্টেল-কর্তৃপক্ষ বেনিয়াপুকুর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। শুক্রবার ছাত্রটির বাবা লালবাজারে গোয়েন্দা-প্রধানের কাছে গিয়ে জানান, বাংলা মাধ্যমে পড়লেও হৃষীক খুবই মেধাবী ছিলেন। অঙ্কে খুব ভাল হলেও এক শিক্ষকের কথায় জেভিয়ার্সে পদার্থবিদ্যায় অনার্স নেন।
হৃষীকের অন্তর্ধানের অভিযোগ পেয়েই পুলিশ এজেসি বোস রোডে ওই হস্টেলের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখতে শুরু করে। ওই ফুটেজে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার সকালে হস্টেল থেকে বেরিয়ে হৃষীক বেকবাগানের দিকে যাচ্ছেন। তার পরে আর কোনও ফুটেজে তাঁকে দেখা যায়নি। তাঁর মোবাইলও বেকবাগানের পর থেকেই বন্ধ হয়ে যায় বলে জানিয়েছে পুলিশ। তার পরেই শুক্রবার সন্ধ্যায় হষীকের দেহ শনাক্ত করে তাঁর পরিবার।