দ্বিতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় ফিরেই, আসামে ফের এনআরসি নিয়ে উঠেপড়ে লেগেছে মোদী সরকার। দিন কয়েক আগেই এনআরসিতে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছিল সদ্য নির্বাচিত কংগ্রেস সাংসদের মাকে। বাদ যাননি কার্গিল যোদ্ধা প্রাক্তন সেনাকর্মী মহম্মদ সানাউল্লাহ ও তাঁর পরিবারও। তাঁকে ‘বিদেশি’ তকমা দিয়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছিল। আর এবার জানা গেল, এনআরসি তালিকা প্রকাশের আগেই আসামে লাখেরও বেশি মানুষকে ‘বিদেশি’ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। রাজ্য বিধানসভায় এ কথা জানিয়েছে আসামের বিজেপি সরকার। আগামক ৩১ আগস্ট প্রকাশিত হবে এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা। তার আগে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন ভাষিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা।
প্রসঙ্গত, আসামে চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ১ লাখ ১৭ হাজার ১৬৪ জনকে বিদেশি বলে শনাক্ত করেছে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল। মঙ্গলবার আসাম বিধানসভায় এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে পরিষদীয় মন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটোয়ারি এই তথ্য দিয়ে জানান, ১৯৮৫ থেকে এ বছরের ৩০ মার্চ পর্যন্ত ২৯ হাজার ৮৫৫ জন বিদেশিকে ফেরত পাঠাতে সক্ষম হয়েছে রাজ্য সরকার। উল্লেখ্য, দিন কয়েক আগেই সংবাদ সংস্থা বিবিসিও জানিয়েছিল, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের করিমগঞ্জ থেকে জেলা প্রশাসন ৩০ জন বাংলাদেশি নাগরিককে সীমান্তের ওপারে পাঠিয়ে দিয়েছে। যাঁদের মধ্যে ২৬জন মুসলিম ও চারজন হিন্দু। ওঁরা প্রত্যেকেই বেশ কয়েকমাস ধরে বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে আটক ছিলেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা বের হওয়া পর্যন্ত সবুর না করে, তার আগেই কেন শুরু করে দেওয়া হয়েছে ‘বিদেশি’দের দেশে ফেরত পাঠানোর কাজ? যদিও এ নিয়ে মিলছে না কোনও সদুত্তর। অন্যদিকে, এই বিদেশি শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ায় ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের পিছনে ১৬৮ কোটি ২০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলে জানিয়েছেন পাটোয়ারি। তিনি এ-ও জানান, আর ১,২৪৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা এখনও পর্যন্ত খরচ হয়েছে এনআরসি প্রক্রিয়ায়। তবে এই বিশাল পরিমাণ টাকা খরচ করে সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে এনআরসি প্রক্রিয়া চললেও বিজেপি নেতারা কিন্তু গোটা প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে চলেছেন।
মঙ্গলবার বিজেপি বিধায়ক শিলাদিত্য দেব মন্তব্য করেন, গোটা প্রক্রিয়াটাই ভুলপথে পরিচালিত হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট নিয়োজিত এনআরসি সমন্বয়ক প্রতীক হাজেলার বিরুদ্ধে কামান দাগেন তিনি। শিলাদিত্যের অভিযোগ, দেড় কোটি বাংলাদেশি মুসলিমকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হচ্ছে এনআরসি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। কিন্তু বাস্তব ছবিটা ঠিক বিপরীত। মঙ্গলবারই নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণ দিতে গিয়েছিলেন দুই বাঙালি। দরং জেলার সিপাঝাড়ের বাসিন্দা সৈজুদ্দিন আলি ও আবদুল খালেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, দুজনেই ‘বাংলাদেশি’। এভাবে রাজ্যের নানা জায়গায় বাঙালিদের গায়ে ‘বাংলাদেশি’ তকমা লাগানো হচ্ছে বলে অভিযোগ।