ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (আইএমএ) ডাকে আজ, বুধবার এই মুহূর্তে দেশজুড়ে চলছে চিকিৎসকদের ধর্মঘট। যার কারণ, লোকসভায় পাশ হওয়া জাতীয় মেডিক্যাল কমিশন(এনএমসি) বিল। আসলে আইএমএ-র আপত্তি সত্ত্বেই এবং বিরোধীদের হাজারও প্রতিবাদের মধ্যেই মোদী সরকারের তরফে লোকসভায় পাশ করা হয় জাতীয় মেডিক্যাল কমিশন বিল। তবে লোকসভায় বিল পাশ হলেও ধর্মঘটরত চিকিৎসক সংগঠনগুলি এবং বিরোধী শিবিরের ভরসা এখন রাজ্যসভা। ওই বিলের আপত্তিকর দিকগুলি সংসদের উচ্চকক্ষে অন্তত বদল করা হবে বলে তাদের সকলেরই আশা।
ইতিমধ্যেই এই বিলের বিরুদ্ধে রাজধানীর পথে নেমেছিলেন আইএমএ সদস্যেরা ও চিকিৎসকদের একাংশ। এইমস থেকে প্রায় পাঁচ হাজার চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মী প্রতিবাদ মিছিল করেন। পুলিশের সঙ্গে তাঁদের ধস্তাধস্তি হলে প্রায় শ’তিনেক চিকিৎসককে গ্রেফতারও করা হয় কিছু ক্ষণের জন্য। এর প্রতিবাদে এইমসের ফেডারেশন অব রেসিডেন্ট ডক্টরস’ অ্যাসোসিসেশন (এফওআরডিএ ) এবং রেসিডেন্ট ডক্টরস’ অ্যাসোসিয়েশন (আরডিএ)-র চিকিৎসকেরা কাজ করেন কালো ব্যাজ পরে। পাশাপাশি, দু’টি সংগঠনই বিলটিকে ‘অগণতান্ত্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর পরিপন্থী’ আখ্যা দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বেশ কিছু সুপারিশ জানিয়েছিল বিলটির উপরে। সেগুলিকে উপেক্ষা করে চিকিৎসক সমাজের পক্ষে ক্ষতিকর কিছু ধারা ঢোকানো হয়েছে বলে অভিযোগ চিকিৎসকদের। লোকসভায় কংগ্রেসের এন কে রাঘবন, তৃণমূলের কাকলি ঘোষ দস্তিদারের মতো বিরোধী শিবিরের সাংসদেরাও এই বিলের বিভিন্ন দিক নিয়ে আপত্তি জানান। তবে সে সবও খারিজ হয়ে যায়। বিলটি লোকসভায় পাশ হয়েছে ২৬০-৪৮ ভোটে। এবার রাজ্যসভায় তা পাশ হয়ে আইনে পরিণত হলে মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া আর থাকবে না। তার জায়গা নেবে জাতীয় মেডিক্যাল কমিশন। তবে এটিও স্বাধীন সংস্থা হবে না।
বিলের ৪৫ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের যে কোনও পরামর্শ বিনা প্রশ্নে মানতে বাধ্য থাকবে জাতীয় মেডিক্যাল কমিশন। শুধু তাই নয়। গ্রামে চিকিৎসকের ঘাটতি মেটানোর নাম করে ‘বিশেষ সার্টিফিকেট’ দিয়ে সাড়ে তিন লক্ষ জনস্বাস্থ্য কর্মীকে অ্যালোপ্যাথি ওষুধ দেওয়ার অধিকার দেওয়ার কথা রয়েছে বিলের ৩২ নম্বর ধারায়। আবার, সরকার বলছে, ‘চিকিৎসকের অধীনে থেকেই সাধারণ কিছু রোগের ক্ষেত্রে মডার্ন মেডিসিন’ (অর্থাৎ অ্যলোপ্যাথি ওষুধও) দিতে পারবেন জনস্বাস্থ্য কর্মীরা। বিলটি নিয়ে চিকিৎসক সংগঠনগুলি এবং বিরোধীদের আপত্তির এটি একটি বড় কারণ।
তাই এইমসের আরডিএ সভাপতি অমরেন্দ্র মালহি ও সেখানকার ছাত্র সংগঠনের সভাপতি মুকুল কুমার, উভয়েরই আশা, ‘রাজ্যসভায় নিশ্চয়ই বিলটিতে প্রয়োজনীয় সংশোধন হবে।’ উভয়েই এক সুরে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজে ডাক্তার হওয়া সত্ত্বেও গোটা চিকিৎসক সমাজের স্বশাসন ও গর্ব কিছু রাজনীতিক ও আমলার খামখেয়ালের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।’ আইএমএ-র জাতীয় সভাপতি শান্তনু সেনেরও আক্ষেপ, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজে চিকিৎসক হয়েও দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে উঠে পড়ে লেগেছেন, এটা দুর্ভাগ্যজনক।’ আর মোদী সরকারকে সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল আর ভি অশোকনের তোপ, ‘এ তো হাতুড়েদের বৈধতা দিয়ে মানুষের জীবন বিপন্ন করা!’