সোমবার মোহন বাগান দিবসের অনুষ্ঠানে চাঁদের হাট। সমসাময়িক সহ খেলোয়াড় প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় মোহন বাগান রত্ন হয়েছেন বলে তাঁকে অভিনন্দন জানাতে হাজির সুব্রত ভট্টাচার্য, গৌতম সরকাররা। দুই জনেই বললেন,‘প্রসূনের মতো লেফট হাফ ভারতীয় ফুটবলে আর হয়নি। সবুজ-মেরুন আলোয় সাজানো হয়েছিল শতাব্দীপ্রাচীন তাঁবুর প্রধান গেট। বিশাল প্যান্ডেলে ঝুলছিল থোকা থোকা জুঁইয়ের মালা। গেটে ঢোকার মুখে বাজছিল লাইভ সানাই। গ্যালারিতে তুবড়ি, মশালও জ্বলল। মঞ্চে ১৯১১-র ঐতিহাসিক আইএফএ শিল্ড জয়ের অমর একাদশের ছবি। মন্ত্রী থেকে চিত্রতারকা, কিংবদন্তি ফুটবলার থেকে নাট্যব্যক্তিত্ব— উপস্থিত সকলেই।
সুব্রত-গৌতম সরকারদের দেখে আপ্লুত প্রসূনও। মোহন বাগান মাঠে ঢোকার মুখেই তিনি বলে যান,‘১৯৭৬ আমার কেরিয়ারের সেরা বছর। আগের বছর শিল্ড ফাইনালে পাঁচ গোলে হারের গ্লানি। টিম ম্যানেজমেন্ট ২১ জনকে বাদ দিয়েছিল। মাত্র ছ’জনকে রেখেছিল। তার মধ্যে আমি, বাবলু (সুব্রত ভট্টাচার্য), উলগানাথন, দিলীপ পালিত ১৯৭৬ সালে নিয়মিত খেলি। আর সেরা ডার্বি হল ১৯৭৮ সালের কলকাতা লিগের ম্যাচটি। মোহন বাগানের এই সম্মান আমার হৃদয়ে থাকবে। আমার মতো অনেকেই বিএসসি পাশ করা স্নাতক এখন বেকার। আমি চাকরি পেয়েছি মোহন বাগানে খেলার সূত্রেই। সবুজ মেরুন দল থেকে ভারতীয় দলে খেলেছি, অর্জুন পুরস্কার পেয়েছি। এমনকী লোকসভার ভোটে জিতে প্রথম ফুটবলার হিসাবে সাংসদ হয়েছি। এবার হাওড়া লোকসভার কেন্দ্রে হ্যাটট্রিক করার নেপথ্যেও আছে আমার মোহন বাগানী ইমেজ।’
মঞ্চে উঠে প্রসূন যখন বলেন,‘ মোহন বাগান আমার কাছে মহান বাগান।’ তখন চারদিকে হাততালি। মঞ্চে উপস্থিত ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের উদ্দেশ্যে হাওড়ার সাংসদ বলেন,‘মোহন বাগান সমর্থক হিসাবে আমি খেলোয়াড়ী জীবন থেকেই ওকে চিনি। অশোক চ্যাটার্জির হাতে জীবনকৃতি পুরস্কার তুলে দেওয়ার মুহূর্তে সচিব বলেন,‘ উনি আমার মতোই হাওড়ার বিবেকানন্দ স্কুলে পড়তেন। ছোটবেলা থেকেই অশোক চ্যাটার্জির অনুরাগী আমি।’ অশোক বলেন,‘১৯৬০ সালে মোহন বাগান জুনিয়র দলে সুযোগ পেয়েছিলাম। তারপর একটানা সাত বছর খেলেছি। যাটের দশকে ডুরান্ডে হ্যাটট্রিক আমার জীবনের স্মরণীয় ঘটনা।’
প্রথা ভেঙে এ বার দু’জনকে ‘মোহনবাগান রত্ন’ –এর জন্য বাছা হয়েছিল। প্রসূন এলেও আসতে পারেননি দু’বারের অলিম্পিকজয়ী হকি তারকা কেশব দত্ত। ৯২ বছর বয়সী কেশববাবুর বাড়িতে গিয়ে তা তুলে দিয়ে এসেছিলেন ক্লাব কর্তারা। এক কিংবদন্তি না এলেও আর এক জীবন্ত কিংবদন্তি চুনী গোস্বামী এসেছিলেন মোহনবাগানের আজীবন সদস্য পদ দিতে। তবে তিনি মঞ্চে উঠতে পারেননি। সস্ত্রীক অনুষ্ঠান স্থলে ঢোকার মুখে হঠাৎ-ই হোঁচট খেয়ে মাটিতে পড়ে যান তিরাশি বছর বয়সী চুনী। দৌড়ে এসে তাঁকে তোলেন অনুজ সুভাষ-সুব্রত-গৌতম-সত্যজিৎরা। তাঁকে মঞ্চ থেকে নেমে এসে কার্ড তুলে দেন কর্তারা। সদস্য কার্ড দেওয়া হয় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং দেবশঙ্কর হালদারকে। অনুষ্ঠান শেষের মুখে আসেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। মোহনবাগানের হয়ে খেলেছেন। এ দিন সেই ক্লাব থেকে আজীবন সদস্যের কার্ড পাওয়ার পর তিনি বলেন, ‘‘আমি বাবার হাত ধরে মোহনবাগানের খেলা দেখতে আসতাম। আমি ক্রিকেট প্রশাসক। ক্রিকেট চালানো সহজ। কিন্তু ফুটবল ক্লাব চালানো কঠিন। যে ভাবে বর্তমান সচিব মোহনবাগানকে সাহায্য করেছেন, সেটা বিশাল ব্যাপার। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান আইএসএল খেলার চেষ্টা চালাচ্ছে। আশা করব ওরা সফল হবে।’’
জীবনকৃতি পুরস্কার পান ভারতীয় ফুটবলের ষাটের দশকের তারকা ফুটবলার অশোক চট্টোপাধ্যায়। তাঁর গলাতেও সম্মান পাওয়ার পর আবেগ। ‘‘শৈলেন মান্না বলেছিলেন এখানে ভাল খেললে দেশের হয়ে খেলতে পারবি,’’ বলার সময় তাঁর চোখে জল। মহম্মদ শামি আসেননি। এসেছিলেন মনোজ তিওয়ারি-সহ স্থানীয় ক্রিকেটে জোড়া ট্রফি জয়ী পুরো ক্রিকেট দল। বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার নিতে ওঠার সময় অরিজিৎ বাগুইয়ের জন্য হাতাতালির ঝড় উঠল। যা দেখে মনে হল, ক্লাব ইতিহাসের প্রথম স্প্যানিশ কোচ কিবু ভিকুনা এবং নতুন চার বিদেশি হাজির থাকলে অনুষ্ঠান বর্ণময় হত হয়তো!