গ্রামের মেঠো পথ ধরে বাড়ি থেকে স্কুল যেতে সময় লাগতো প্রায় ১ ঘন্টা। দূরত্ব শুনলেও অবাক হতে হয়। মেরেকেটে প্রায় দশ কিমি। এতটা পথ পায়ে হেঁটে স্কুলে যাওয়াটা অত্যন্ত কষ্টকর৷ রোজ রোজ সেই কষ্ট করতে নারাজ ছিল ছোট ছেলেটি৷ ক্যানিং ১ নং ব্লকের সেই ছেলে তাই স্কুলছুট হয়ে গিয়েছিল প্রায়৷ কিন্তু খুদের সেই সমস্যা সমাধান করে দিলেন সেখানকার বিডিও নীলাদ্রিশেখর দে৷ কীভাবে? সেই গল্প শোনালেন স্কুল পালানো ছেলের মা।
অভাবের সংসারে স্কুলছুট ছেলেটিকে জরির কাপড় তৈরির কাজে পাশের গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন অন্যান্য সদস্যরা৷ কিন্তু মা বাদ সেধেছিলেন৷ তিনি চাইছিলেন, অন্যান্য তিন ছেলেমেয়ের মতো বাড়ির কাজ না করে, ছোট ছেলে রশিদ একটু শিক্ষার আলোয় আলোকিত হোক৷ কিন্তু ছেলের এমন স্কুলবিমুখতা দেখে মা সোজা গিয়ে উপস্থিত হন বিডিও নীলাদ্রিশেখর দে’র কাছে৷ সমস্যার কথা জানিয়ে সমাধানের আর্জি করেন৷ আর যেমন কথা, তেমনই কাজ৷
বিডিও নিজেই উদ্যোগী হয়ে ব্যবস্থা করে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্প ‘সবুজ সাথী’র একটি সাইকেলের৷ শুধু সাইকেল নয়, সপ্তম শ্রেণির ছাত্র রশিদ সর্দারের হাতে তুলে দিলেন আরও বেশ কিছু সাহায্য৷ আর তাতেই বদলে গেল রশিদের জীবন৷ এখন নলিয়াখালি হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র রশিদ রোজ সাইকেল চালিয়ে স্কুল যায়৷ আর বিডিও নীলাদ্রিশেখর দে’র এই উদ্যোগ যথেষ্ট সাড়া ফেলেছে এলাকায়। স্কুলছুট ছেলেকে সাইকেলের ব্যবস্থা করে দিয়ে স্কুল ফেরানোর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকেই।
রাজ্য সরকার ‘সবুজ সাথী’ প্রকল্পের মাধ্যমে ইতিমধ্যে কয়েক লক্ষ সাইকেল বিলি করেছেন এ রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে। সরকারি নির্দেশমতো নবম ও দশম শ্রেণিতে সাইকেল দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। সপ্তম শ্রেণিতে সাইকেল দেওয়ার কোনও ব্যবস্থা নেই। আর সপ্তম শ্রেণিতে উঠে পড়া ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল এই স্কুলছুট ছাত্র রশিদ সর্দার।
বিডিও-র সহযোগিতায় ওই ছাত্র আবার
ফিরল স্কুলে। আর যার হাত ধরে এভাবে ফের স্কুল যেতে উৎসাহী হয়ে উঠল রশিদ, ক্যানিং-১ নম্বর ব্লকের সেই বিডিও নীলাদ্রিশেখর দে বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নিজে চান, সমস্ত সাধারণ ঘরে শিক্ষার আলো পৌঁছে যাক। তাই রাজ্য সরকারের অনুমতি নিয়েই এই সাইকেল দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। শুধু সাইকেল দিয়েছে এমন নয় চাল, জামাকাপড় থেকে শুরু করে সমস্ত কিছুই তাকে দিয়ে সাহায্য করা হচ্ছে। কারণ, একটি প্রতিভা অঙ্কুরে বিনষ্ট হোক, আমরা তা চাইনি।’’ আর তারপরেই বিডিও-র এই অভিনব উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা।