২০১৭-র ২ মে৷ বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের এক নৃশংস রূপ দেখেছিল গোটা বাংলা৷ প্রেমিক অজিত রায়ের সঙ্গে পরিকল্পনা করে ওইদিন স্বামী অনুপম সিংকে খুন করে হৃদয়পুরের বাসিন্দা মনুয়া মজুমদার৷ যে ঘটনা প্রশ্ন তুলে দিয়েছিল ‘বিবাহ’ নামক প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্কের উপর৷তারপর থেকে প্রতিটা দিন ছেলের এভাবে ভয়ানক মৃত্যুর বিচার চেয়ে গেছেন অনুপমের মা। আজ ছিল সেই মামলার ফল প্রকাশের দিন। অনুপম হত্যা মামলায় তাঁর স্ত্রী মনুয়া এবং প্রেমিক অজিতকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এই রায়ে একেবারেই খুশি নয় পুত্রহারা মা। তিনি জানালেন, “ সুবিচার পেলাম না”। এই রায়ের বিরুদ্ধে এবার হাইকোর্টে যাবেন অনুপমের বাবা-মা।
সাজা শোনার পর তাঁরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। বৃহস্পতিবার তাঁরা বিচারকের কাছে ছেলের খুনিদের ফাঁসির সাজা দাবি করেছিলেন। তা না হওয়ায় ভেঙে পড়েছেন তাঁরা। অনুপম সিংহের মা জানিয়েছেন, তাঁরা সুবিচার পাননি। আজ সাজা ঘোষণার পরেই বদলে গেছিল বারাসত আদালতের চেহারা। রায় শুনে অনুপমের অখুশি মা-বাবা ভেঙে পড়েন কান্নায়। তাঁরা মানতেই পারছেন না তাঁদের একমাত্র ছেলের হত্যাকারীরা এই পৃথিবীতেই বেঁচে থাকবে। গতকাল মনুয়া এবং অজিতকে দোষী সাবস্ত্য করার পর থেকেই তাঁদের দাবি ছিল মনুয়াদের ফাঁসি। কিন্তু এই রায় কিছুতেই মানতে পারছেন না তাঁরা।
গত ২ বছরের বেশি সময় ধরে ছেলের খুনের বিচার চেয়ে লড়াই করে আসছিলেন এই বৃদ্ধ দম্পতি৷ তাঁদের দাবি ছিল, ফাঁসির সাজা দিতে হবে মনুয়া ও অজিতকে৷ কিন্তু এদিন বিচারক যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা করতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরা৷ জানান, ‘‘বিচার ব্যবস্থার প্রতি আমাদের আস্থা উঠে গিয়েছে৷ আমাদের সঙ্গে বেইমানি করা হয়েছে৷ আমার ছেলে বিচার পেল না৷ আমরা বিচার পেলাম না৷’’
এখানেই শেষ নয়, এই রায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেয় মৃত অনুপম সিংয়ের পরিবার ও বন্ধু মহলের একাংশ৷ রায় শোনার পরেই আদালত চত্বরে হট্টগোল শুরু করেন তাঁরা৷ সূত্রের খবর, পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়, যখন দোষী মনুয়া ও অজিতকে দোতলা থেকে এক তলায় নিয়ে আসে পুলিশ৷ তখন কার্যত পরিস্থিতি হাতের বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়৷ পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েন অনুপমের বাড়ির লোকেরা৷ কোনওক্রমে তাঁদের সামাল দেয় পুলিশ বাহিনী৷
২০১৭ সালের ২ মে বেসরকারি ভ্রমণ সংস্থার কর্মী অনুপমকে তাঁর বাড়িতেই নৃশংস ভাবে খুন করা হয়। পুরো থেঁতলে দেওয়া হয় তাঁকে। আততায়ী যাওয়ার আগে অনুপমের হাতে থাকা বিয়ের আংটি পর্যন্ত খুলে নেয়। সেখান থেকেই সন্দেহ হয় এই ঘটনায় বিবাহবর্হিভূত সম্পর্ক থাকতে পারে। তদন্তের জাল গুটিয়ে আনতে পুলিশ একাধিক মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, খুনের সময় স্ত্রী মনুয়া মোবাইলে স্বামীর শেষ আর্তনাদ নিজের কানে শুনেছেন। এর পর তথ্য-প্রমাণ হাতে পাওয়ার পর মনুয়া এবং অজিতকে গ্রেফতার করে পুলিশ।